বিএনপিতে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ

রাজবাড়ীর দুটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে গণসংযোগ করছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। দুটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ইতিমধ্যে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রার্থী ঘোষণা করে নিজেদের মতো মাঠে নেমেছে। বাম দলগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে গত শুক্রবার ঢাকায় যে ২৪৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সেখানে রাজবাড়ীর দুটি আসনও রয়েছে।

রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ)

১৯৯১ সালের পর একবার ছাড়া প্রতিবারই এ আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেওয়া আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম এমপি নির্বাচিত হন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য এবার মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে মনোনয়ন বাতিল করে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।

সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন গাজী বলেন, যিনি কখনো রাজপথে ছিলেন না, আজ তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আসলাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে ফ্যাসিবাদী সরকারের মামলার আসামি হয়ে বহু নেতা-কর্মীসহ তিনি দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন। অথচ তাঁকে (খৈয়ম) কখনো মাঠে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেরও প্রয়োজন মনে করেননি।

জানতে চাইলে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর আসলাম মিয়া ও জেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের জন্য একাধিকবার ফোন করেছেন, বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি বিশ্বাস করেন, দলের নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের বিরুদ্ধে যাবেন না।

আসনটিতে জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশের শুরা সদস্য মো. নূরুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী নির্বাচনের পরিবেশ সমান্তরাল হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ মোল্লা, গণ অধিকার পরিষদের জাহাঙ্গীর খান, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান ও ইসলামী আইন মজলিসের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম কাশেমী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খোন্দকার হাবিবুর রহমান। এনসিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

রাজবাড়ী-২ (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী)

১৯৯১ সালের পর এখানে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী একবার করে জয় পেয়েছেন। বাকি সব নির্বাচনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এতে ক্ষুব্ধ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসিরুল হকের (সাবু) সমর্থকেরা। ১৭ ডিসেম্বর পাংশা উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নাসিরুল হক বলেন, ‘এই মনোনয়ন রাজবাড়ীর মানুষ, বিশেষ করে পাংশা-কালুখালীর মানুষ মেনে নিতে পারছে না। পুনর্বিবেচনা করে জনগণ সমর্থিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘আমার কাছে কাউকে আসতে হবে না। আমি নিজেই সবার কাছে যাব। এলাকার উন্নয়ন ও দলের স্বার্থে সবাইকে নিয়েই রাজবাড়ী-২ আসনটি উপহার দিতে চাই।’

জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি মো. হারুন-অর রশিদকে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির কিছু কর্মী সাধারণ ভোটার ও সমর্থকদের কেন্দ্রে না যেতে নিরুৎসাহিত করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সমর্থক ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাঠ জামায়াতের পক্ষে আছে বলে তিনি দাবি করেন।

আসনটিতে দলের সংগঠক সাইয়েদ জামিলকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি। সৈয়দ জামিল বলেন, এখন বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা, কুশল বিনিময় করছেন।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আব্দুল মালেক, গণ অধিকার পরিষদের জাহিদ শেখসহ কয়েকজন গণসংযোগ করছেন। জেলা কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. শফিউল আজম খানকে মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি।