হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে ঝলসে যাওয়া শিশু মহিমা

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছে শিশু মহিমা
ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে চিৎকার করে উঠছে শিশু মহিমা খাতুন (৭)। মাঝেমধ্যে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকছে। দাদি জোবেদা বেগম তার পায়ের কাছে বসে কাঁদছেন। রাজশাহীর বাগমারার বড় বিহানালী ইউনিয়নের মুরারীপাড়া গ্রামের এই পিতৃহীন শিশুটির শরীরের পেছনের অংশে গরম পানিতে ঝলসে গেছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত পৌঁছালেও দুশ্চিন্তা কাটছে না পরিবারের।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত শুক্রবার বিকেলে অন্য শিশুদের সঙ্গে বাড়ির উঠানে খেলছিল শিশু মহিমা। পাশে খোলা স্থানে তার মা তরকারি রান্না করছিলেন। একপর্যায়ে শিশুটি অসাবধানতাবশত তরকারির হাঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় গরম তরকারি শিশুর কোমরের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতে শিশুটির পেছনের অংশ ঝলসে যায়। পরিবার তাকে বাড়িতে রেখে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেয়। তবে অবস্থার উন্নতি না হয়ে ঘা ছড়িয়ে পড়ে। বাড়িতে কাতরাচ্ছিল ছোট্ট মহিমা। গতকাল রোববার বিকেলে বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মী গিয়ে শিশুটিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে ও অপচিকিৎসা দিতে দেখেন। তিনি জাহিদ হাসান নামের এক ইলেকট্রিশিয়ানকে জানিয়ে শিশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। জাহিদ হাসান ওই শিশুকে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সঙ্গে শিশুর দাদিকে নিয়ে আসেন।

গতকাল রোববার বিকেলে বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মী গিয়ে শিশুটিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে ও অপচিকিৎসা দিতে দেখেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে তাঁর সহকর্মীকে অনুরোধ করেন।

গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে ছোট্ট মহিমাকে কাতরাতে দেখা যায়। পাশে বসে সান্ত্বনা দেন দাদি। শিশুটির দাদি জোবেদা বেগম বলেন, তিন মাস আগে তাঁর ছেলে সোহেল রানা (মহিমার বাবা) মারা যান। মহিমার মা মর্জিনা খাতুন মানসিক প্রতিবন্ধী। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর মর্জিনা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সব সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। শিশুর শরীর গরম পানিতে ঝলসে যাওয়ার পর বাড়িতে রেখে বিভিন্ন ধরনের গাছের রস দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। টাকা না থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। শিশুটির মা-ও মেয়ের সেবাযত্ন করতে পারেন না।

জোবেদা বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর তাঁরা ঠিকমতো খেতে পান না। এরপর কীভাবে চিকিৎসা করাবেন? তিনি নাতনির চিকিৎসার জন্য সহায়তার আহ্বান জানান।

মহিমাকে হাসপাতালে নেওয়া গ্রামের ইলেকট্রিশিয়ান জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুর পরিবার অসহায় ও অসচেতন। বাড়িতে শিশুটি ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। সেখানে রেখে গ্রাম্য চিকিৎসার নানা রকম ক্ষতিকারক উপকরণ ঝলসে যাওয়া স্থানে ব্যবহার করা হচ্ছিল। তিনি জানার পর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শিমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করায় অনেক স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারটি অসহায় হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হবে।