চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন ছয়টি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ বেলা দেড়টার দিকে তোলাছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন ছয়টি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবিতে আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ভবনটির সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে সহ-উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে।

প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় রয়েছে। ভবনের ভেতরেই সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রয়েছেন।

প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী ও মাহবুবুল হাসান; বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোশরেফুল হক, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক রিশাদ আমীন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক আবিদ শাহরিয়ার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক চন্দনা রানি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ, নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া সিকদার প্রমুখ।

এর আগে একই দাবিতে গতকাল রাত সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও বামপন্থী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। কর্মসূচিতে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য। কটূক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক যে আসন, সে আসনে সহ-উপাচার্য থাকতে পারেন না। যার কারণে তাঁকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘সহ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে তালা থাকবে।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির বলেন, ‘সহ-উপাচার্য রাজাকারদের পক্ষে বয়ান তৈরি করছেন, যেটি ঘৃণা ও লজ্জাজনক। তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। একই ধারাবাহিকতায় তাঁর পদত্যাগ চেয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছি।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ আমাদের একটি বোর্ডের বৈঠক ছিল। সে সময় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী হঠাৎ সেখানে প্রবেশ করে বোর্ড বন্ধ করতে বলেন। সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা নিচে গিয়ে ভবনে তালা দিয়ে দেন।’

রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্য বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনী পালানোর সময় কীভাবে এত বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা দরকার।’

সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রশাসনিক ভবনে আছি, আমার দায়িত্ব পালন করছি। ভবনে তালা মারা হয়েছে, সেটি আমি শুনেছি। তবে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি ঢাকায় প্রোগ্রামে আছি। মাইকের অনেক আওয়াজ, আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না।’ সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।

গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব, না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’

তবে সভায় উপস্থিত বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলে জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল।