ক্রাচে ভর দিয়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে কলেজে যান ইয়াছমিন

ক্রাচে ভর করে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলেজে যান ইয়াছমিন আক্তার। সম্প্রতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

বাঁ পা থেকেও অচল, শীর্ণ ডান পা। সেই শীর্ণ পা আর ক্রাচে ভর দিয়ে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হেঁটে কলেজে যান ইয়াছমিন আক্তার। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাঙচিল গ্রামের দিনমজুর নুর নবীর মেয়ে। ইয়াছমিন সদর উপজেলার ড. বশির আহমদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

ইয়াছমিনের বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কলেজে যেতে তিন কিলোমিটার ক্রাচে ভর দিয়ে গেলেও বাকি পথ অটোরিকশায় যান। ইয়াছমিন জানান, একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করলে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে তাঁর কষ্ট কিছুটা কমতো। কিন্তু তাঁর দিনমজুর বাবার আয়ে কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইয়াছমিনের বয়স যখন দেড় মাস, তখন তাঁকে ঘরে রেখে পাশের বাড়িতে পানি আনতে যান তাঁর মা। পাশে থাকা একটি চেরাগ থেকে বিছানার তোশকে আগুন ধরে যায়। আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয় ইয়াছমিনের দুটি পা।

ইয়াছমিনের বাবা নূর নবী বলেন, আগুনে ইয়াছমিনের বাঁ পায়ের সব আঙুল পুরোপুরি পুড়ে যায়। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ও রগ পুড়ে যায়। ঘটনার পর তিনি মেয়েকে স্থানীয় চর আলগী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেন। চিকিৎসক বলেছিলেন, সমবয়সী কোনো শিশুর শরীরের চামড়া পাওয়া গেলে ইয়াছমিনের পায়ে অস্ত্রোপচার করা যাবে। কিন্তু তিনি সেটি পাননি। এর ফলে চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মেয়ের বাঁ পায়ের রগ শুকিয়ে পা ভাঁজ হয়ে ওপরের দিকে বাঁকা হয়ে যায়। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলসহ কিছু অংশ অচল হলেও ওই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়।

নুর নবী বলেন, ইয়াছমিনের পড়ালেখার প্রতি অনেক ঝোঁক রয়েছে। তাই তিনি দিনমজুর হওয়া সত্ত্বেও ইয়াছমিনের পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে কলেজে যেতে ইয়াছমিনের অনেক কষ্ট হয়। শীর্ণ পা নিয়ে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরের থানারহাট পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার পর অটোরিকশায় উঠে কলেজে যান ইয়াছমিন।

ইয়াছমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, যাতায়াত খরচের অভাবে তিন কিলোমিটার পায়ে হাঁটতে হয় তাঁকে। একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা হলে তিনি আরও ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারতেন, কষ্টও কম হতো। তবে তাঁর বাবার সেই সামর্থ্য নেই। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষকতা করতে চান ইয়াছমিন।

ড. বশির আহমদ কলেজের অধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা বলেন, সমাজে অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁদের কেউ যদি ইয়াছমিনের একটি কৃত্রিম পা সংযোজনের বিষয়ে এগিয়ে আসেন, তবে মেয়েটির চলাফেরার কষ্ট কিছুটা কমতো।