অধ্যক্ষের ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের অভিযোগ

লালমনিরহাট জেলার মানচিত্র

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফ সরকার তাঁর কলেজের নারী প্রভাষককে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে তাবাসসুম রায়হান নামের কলেজের ইংরেজি বিভাগের ওই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন।

আজ বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তাবাসসুম রায়হান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা আমেনা শিরীন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকার। পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে উসকানি দেওয়া এবং দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে চাকরি থেকে কেন চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে না, এ বিষয়ে জবাব চেয়ে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তাবাসসুম রায়হান বলেন, ‘আবদুর রউফ সরকার ২০২২ সালের মার্চ মাসে আমাকে বলেন, “আমার গাড়ি আছে। আপনি আমার সঙ্গে লং ড্রাইভে যেতে পারেন। আমার গাড়িতে কলেজে আসা–যাওয়া করতে পারেন। আপনার যেকোনো সমস্যা আমাকে বলতে পারেন। তখন আমি আপনাকে কোথায় নিয়ে যাই দেখবেন?” এগুলোর কোনোটিই আমার কাছে নৈতিকভাবে সঠিক মনে না হওয়ায় আমি তা কলেজের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ই–মেইলের মাধ্যমে ও মুঠোফোনে কল করে জানাই। এরপর আমাকে ২০২২ সালের ৭ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত কলেজে অনুপস্থিত থাকা এবং ক্লাস না নেওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে এই নারী শিক্ষক উল্লেখ করেন, ওই বছরের ৭ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত এবং ১৮ থেকে ১৯ মে ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। ছুটির আবেদন মঞ্জুর করে সই দিয়েছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ। তা ছাড়া এর মধ্যে এক দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার) এবং আরেক দিন বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটির দিন। বাকি দিনগুলোতে তাবাসসুম রায়হান কলেজে উপস্থিত ছিলেন, কলেজের শিক্ষক হাজিরা খাতায় সই করেছেন, ক্লাস নিয়েছেন, শিক্ষার্থী উপস্থিতি খাতায়ও সই করেছেন।

২০২২ সালের ২৩ মে পাওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব তাবাসসুম রায়হান ওই বছরের ২৯ মে দেন। চলতি ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি কলেজের কাছে ১৭ মাসের বকেয়া বেতন (১ লাখ ২৩ হাজার ৩২৫ টাকা) প্রদানের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেন তাবাসসুম রায়হান। এই আবেদনের কোনো সুরাহা না করে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেন কলেজ অধ্যক্ষ।

তাবাসসুম রায়হান আরও বলেন, কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের ৩৯ জন শিক্ষক পাঁচ দফা দাবিতে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারিতে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে একটি লিখিত আবেদন দেন। এরপর এসব শিক্ষক দাবি আদায়ে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ওই সময় কলেজ অধ্যক্ষের নির্দেশে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কর্মচারী সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। এ অবস্থায় কলেজের সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে তিনি চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

পরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ১ মার্চ উত্তর বাংলা কলেজে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে এখন পর্যন্ত ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে হঠাৎ ১৫ মার্চ কলেজ অধ্যক্ষ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে একটি চিঠি দেন।

ন্যায়বিচারের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন দাবি করে তাবাসসুম রায়হান বলেন, ‘কলেজ অধ্যক্ষের এসব কর্মকাণ্ডে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিব্রত বোধ করছি। আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আগে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা অনুসরণ করা হয়নি। এ ধরনের অবৈধ আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমি আদালতে যাব।’