কুষ্টিয়ায় দুস্থ নারীদের তালিকায় ‘কোটিপতি’ চেয়ারম্যানের স্ত্রী, এলাকায় চাঞ্চল্য
কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুলের বিরুদ্ধে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় নিজের স্ত্রীর নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তালিকায় ইউপি সদস্যদের স্ত্রীর নামও যুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিডব্লিউবি কর্মসূচির দুস্থ নারীদের তালিকায় কোটিপতি চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নাম দেখে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইনে আবেদনের সময় কেউ হয়তো ফাঁসাতে আমার স্ত্রীর নাম দিয়ে আবেদন করেছেন। এ জন্য নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ আছে। নাম যাচাই-বাছাইয়ে ত্রুটি ছিল। বিষয়টি ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মহোদয় তদন্ত করছেন।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুস্থ নারীদের প্রতি মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়নের ১৮৭ জন দুস্থ নারী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৯৭ জনকে চূড়ান্ত করে যাচাই-বাছাই কমিটি।
চলতি বছরের ৩০ জুন ভিডব্লিউবি নারী বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুল, সদস্যসচিব হিসেবে ইউনিয়নের সচিব, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও সর্বশেষ ইউএনও সই করে ৯৭ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। তবে তালিকায় প্রকৃত দুস্থ নারীদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের স্ত্রীদের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট ইউএনওর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন আমবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. বকুল আলী। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন নিজের স্ত্রীসহ কয়েকজন ইউপি সদস্যদের স্ত্রীর নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। এ ছাড়া তালিকার বেশির ভাগ নারীর কাছ থেকে কার্ডপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। আমবাড়িয়া ইউনিয়নে ৯৭ জন দুস্থ নারীর তালিকায় ৬০ নম্বরে আছেন ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. আঞ্জুমান আরার নাম। স্ত্রীর স্বামী বা অভিভাবক হিসেবে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদের নাম ব্যবহার করেছেন।
তালিকায় ইউপি সদস্যদের স্ত্রী-স্বজন
চেয়ারম্যান ছাড়াও ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহেল রানার স্ত্রী মোছা. নুরুন্নাহার বেগমের নাম আছে ৮৩ নম্বরে। স্বামী বা অভিভাবকের স্থলে লেখা রয়েছে রমজানপুর। তালিকায় ১৯ নম্বরে রয়েছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনাজুল ইসলামের স্ত্রী ময়না খাতুনের নাম। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দাউদ আলীর স্ত্রী জরিনা খাতুনের নাম আছে ৩৬ নম্বরে। এ ছাড়া ৪২ নম্বরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী মোছা. সুন্দরী আক্তারের নাম অন্তর্ভুক্ত করালেও অভিভাবকের স্থলে ভেদামারী গ্রাম লেখা। এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যানকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, দলীয় সেসব লোকের স্বজনদের তালিকায় রাখা হয়েছে। ৯৭ নম্বরে নুর আলীর স্ত্রী মোছা. আমেনা খাতুন, ৫৪ নম্বরে সজীব আহম্মেদের স্ত্রী গুনি খাতুন, ২৩ নম্বরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মারফত আলীর আপন ভাগনে মোছা. জানেরা খাতুনের নাম আছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডপ্রবাসী ছিলেন। তাঁর দোতলা বাড়ি আছে। তাঁর ছোট ভাইও থাইল্যান্ডপ্রবাসী। এলাকায় তাঁরা কোটিপতি হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন বলেন, তালিকায় অন্তত ১১ জনের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছ। যাচাই-বাছাইয়ে হয়তো ত্রুটি ছিল। উপজেলা পর্যায়ে নাম সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।
ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নামসহ আরও কয়েকটি নামের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামীকাল (সোমবার) সরেজমিনে তদন্ত করবে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তালিকায় কোনো অসংগতি থাকলে তালিকা প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের সুযোগ আছে।