‘সরকার আর বাসমালিকদের তামাশা থামছেই না’

আজ সকাল থেকে বগুড়া থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসের চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। বিকেলে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া আন্তজেলা কোচ টার্মিনালে
ছবি: সোয়েল রানা

উত্তরের জেলা বগুড়া থেকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই আজ শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসের চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। অনেক কাউন্টার থেকে কেনা যাত্রীদের অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় না যেতে পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

আজ শুক্রবার সকাল থেকে শহরের ঠনঠনিয়া টার্মিনাল, সাতমাথা বাস কাউন্টার, বনানী বাসস্ট্যান্ড ও লিচুতলা মোড় ঘুরে বাস চলাচল বন্ধের এ চিত্র দেখা গেছে। ঠনঠনিয়া টার্মিনালে বেশির ভাগ বাস কাউন্টার বন্ধ আছে। সকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও বড় বড় কোম্পানি তাদের বাস ছাড়েনি। দুপুর পর্যন্ত ছোটখাটো দু-একটি কোম্পানির বাস যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে।

পরিবহনমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলা ছাড়াও উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে বগুড়া হয়ে দিনে–রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ৮০০ দূরপাল্লার কোচ চলাচল করে। তবে আজ সকাল থেকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস খুব বেশি ছাড়েনি। বগুড়া থেকে স্বাভাবিকভাবে রাজধানীসহ দূরবর্তী গন্তব্যে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০টি বাস ছাড়লেও আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে ঠনঠনিয়া বাস টার্মিনালে রাহেলা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ঢাকার সাভারের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দুদিন আগে শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ সকালে বাসের জন্য কাউন্টারে আসার পর তাঁকে টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে বলা হয়, ঢাকায় কোনো বাস আজ যাবে না।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আর বাসমালিকদের তামাশা থামছেই না। অন্য বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাসমালিকেরা নির্লজ্জের মতো ধর্মঘট ডেকেছে। সমাবেশ শেষ হতে না হতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। সমালোচনার মুখে এখন আবার ধর্মঘট ছাড়াই ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। সমালোচনার ভয়ে ধর্মঘট না ডেকে মালিকেরা দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখে যাত্রীদের সঙ্গে তামাশার খেলায় মেতেছেন।’

হানিফ পরিবহনের ঠনঠনিয়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহমুদ কামাল বলেন, ঢাকায় যাওয়ার যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সকাল থেকে ট্রিপ বাতিল করতে হয়েছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরতলির বনানী বাসস্ট্যান্ড ও লিচুতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, অন্যদিন এ দুটি স্থানে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে গাড়ির চাপে যানজট লেগে থাকলেও আজ সকাল থেকে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস নেই। পণ্যবাহী ট্রাকও চলাচল করছে কম। ফাঁকা মহাসড়কে কয়েক মিনিট পরপর দু-একটি অভ্যন্তরীণ রুটের বাস এবং ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে।

শহরের সাতমাথায় এসআর ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, এস আই ট্রাভেলস, মানিক পরিবহন, আর কে পরিবহন, একতা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, শাহ ফতেহ আলীসহ বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। দু-একটি কাউন্টার খোলা থাকলেও আজ ও আগামীকাল শনিবারের কোনো টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না।

কাউন্টার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঢাকায় যাওয়ার যাত্রী মিলছে না। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে যেসব কোচ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করতে হয়েছে।

এসআর ট্রাভেলসের সাতমাথা কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সকালে দুটি বাস নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেলেও যাত্রীসংকটে অন্য কোচের যাত্রা বাতিল করে টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া হয়ে বিভিন্ন জেলায় দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। সকাল থেকে অন্য জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস কম আসছে। এ ছাড়া বগুড়া থেকে যেসব কোচ রাজধানীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়, আজ সকাল থেকে সেগুলো যাত্রীর সংকটে পড়েছে। এ জন্য কোনো কোনো কোচের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি তাঁর।

এর আগে গত দুই মাসে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ ছাড়া বিএনপির অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের আগে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো। এতে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছিল।