রাজেন্দ্র কলেজে হামলার ঘটনায় মামলা হয়নি, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের হামলায় তিনজন জখম হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কলেজের কবি জসীমউদ্‌দীন ছাত্রাবাসে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রাবাসে স্থানীয় বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ হামলার ঘটনার পর থেকে কবি জসীমউদ্‌দীন হলের ছাত্রাবাসের  শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

কলেজের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের বাইতুল আমান এলাকায় অবস্থিত সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের কবি জসীমউদ্‌দীন হলে বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটে। মাঠে ফুটবল খেলার সময় ছাত্রদের একটি বল এলাকার কলেজের একই মাঠে তরুণদের খেলার জায়গায় ঢুকে গেলে সেটি আটকে রাখে এলাকাবাসী। এ নিয়ে বাদানুবাদের জেরে এলাকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ছাত্রাবাসে ঢুকে তিনতলা–বিশিষ্ট ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার ৮ থেকে ১০ ছাত্র আহত হন। তাঁদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত তিনজনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই তিনজন হলেন মো. শাকিল মৃধা (২৩), তুষার মাহমুদ (২৪) ও মো. রেজা মিয়া (২০)। তাঁরা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বহিরাগতরা  মাঝেমধ্যে  তাঁদের ওপর নির্যাতন চালায়। এ ছাড়া রাত নামলেই ছাত্রাবাস–সংলগ্ন কলেজের মাঠে বসে মাদকের আড্ডা। এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। ছাত্রাবাসের বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। খাওয়ার পানির জন্য যে নলকূপ রয়েছে, তার মাথা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রাবাসের সুপার ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে এসব সমস্যার কথা জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ভবনটি ভগ্নদশা অবস্থায় রয়েছে। অন্য ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার করা হলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এ ছাত্রাবাস সংস্কার করা হচ্ছে না।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজ ক্যাম্পাসের  দক্ষিণ দিকে লোকালয়ের কাছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে কবি জসীমউদ্‌দীন হল। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ১৯৯০ সালে নির্মিত তিনতলা–বিশিষ্ট এ ছাত্রাবাস ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনতলার বিভিন্ন কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ছাত্রবাসের নিচতলায় ১০২ ও ১০৩ এবং দোতলার ২০২ এবং কমনরুমের জানালার কাচ ভেঙে নিচে পড়ে আছে। কমনরুমের আসবাব ভাঙাচোরা। টেলিভিশনটি উল্টে পড়ে আছে।

সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ওই ছাত্রাবাস অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। যখন–তখন ইচ্ছা করলেই বহিরাগতরা ঢুকে যেতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় বহিরাগতদের হামলার পর ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা রাতটি আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছেন। ছাত্রাবাসের ফটকের কলাপসিবল গেট মরিচার ধরে নষ্ট হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কবি জসীমউদ্‌দীন ছাত্রাবাসে মোট ৪৮ শিক্ষার্থীর অবাসনের সুযোগ রয়েছে। তবে ভগ্নদশার কারণে গড়ে ৩০ শিক্ষার্থী বসবাস করেন। গতকাল দিবাগত রাতে এ ছাত্রাবাসে ১৮ শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকায় আমরা পড়াশোনা করতে পারছি না।’

কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা বলেন, হল সুপারকে এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।

হল সুপার বেলাল হোসেন বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের ভাইভা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে পারেননি। তবে তিনি অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, বহিরাগতদের হামলায় ৮ থেকে ১০ জন ছাত্র আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপরে কলেজ কর্তৃপক্ষকে মামলা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি মামলা হিসেবে নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।