পাটগ্রামে কম্বল পেয়ে শীতের কষ্ট ঘুচল ২০০ মানুষের

পাটগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়নের শীতার্ত ২০০ মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে পাটগ্রাম আহারতুল্লাহ প্রধান সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠেপ্রথম আলো

‘হামরা এমন মানষি, চোখেও দেখি না আর কারোটে চাবারো পাও না। জাড়োত (শীতে) মোর জীবনটা বেড়ে যায় ছোল, তোমারলার ঢুশা (কম্বল) দিয়া মোর জাড়ের কষ্ট দূর হইল। ইয়াত মোর শরীরটা গরম থাকবে, জাড়ও কাটবে।’

আজ শুক্রবার অসহনীয় শীতের মধ্যে একটি কম্বল পেয়ে এসব কথা বলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শ্যামল রায় (৬৫)। তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। কম্বল পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান তিনি।

পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের শ্যামল রায়ের মতো শীতার্ত ২০০ মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের সহায়তায় কম্বল তুলে দেওয়া হয়। আজ বিকেলে পাটগ্রাম আহারতুল্লাহ প্রধান সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়।

এর আগে পাটগ্রাম পৌরসভার স্টেশনপাড়া; পাটগ্রাম ইউনিয়নের জিমনাল, খানপাড়া, ধবলসুতি, রহমতপুর; কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের পানবাড়ি, কুচলিবাড়ি, লক্ষ্মণার্থের কামাত; বাউরা ইউনিয়নসহ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের দুস্থ ও অসহায় শীতার্ত নারী-পুরুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কম্বলের স্লিপ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা পাটগ্রামের সদস্যরা।

কম্বল পেয়ে কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের সীমান্ত গ্রাম লক্ষ্মণার্থের কামাতের বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘মোর কোনো জমি-জায়গা নাই। মানষির জমিত ঘর করি থাকং। ঠান্ডার (শীত) সময় ঘরে কুয়াশা আর বাতাস ঢোকে। বুড়িটারও (স্ত্রী) অসুখ, চোখেও দেখে না। সীমান্ত গ্রামোত আসি কাহোই হামার খোঁজ নেয় না। তোমরায় এইবার ঢুশা (কম্বল) খান দিলেন। এই জাড়োত বুড়িটার ভালো করি ঘুম পাড়ির পাইবে।’

জগতবেড় ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী আজিমুউদ্দিন বলেন, ‘এই কম্বলটা পেয়ে মোর খুবই উপকারে আসিল বাহে।’

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের সাবেক শিক্ষক ও ক্রীড়াবিদ এ টি এম আকিকুল হক। তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়, এর বাইরে সমাজের নৈতিক দায়িত্ব পালন করে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত দুস্থ মানুষের হাতে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছে। এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। এ জন্য আমি প্রথম আলোকে সাধুবাদ জানাই।’

শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণের সময় স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলম, প্রথম আলোর পাটগ্রাম প্রতিনিধি এ বি সফিউল আলম, পাটগ্রাম বন্ধুসভার সাবেক সদস্য আজিজুল হক, মামুন সরকার, রমজান আলী, সিরাজুল ইসলাম বসুনিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

বিকাশে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।