আওয়ামী লীগ আমলে বন্ধ বাগেরহাটে লখপুর গ্রুপের ১৭টি শিল্পকারখানা চালুর দাবি
বাগেরহাটের ফকিরহাটে লখপুর গ্রুপের বন্ধ ১৭টি শিল্পকারখানা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ শুক্রবার উপজেলার কাটাখালী-সংলগ্ন মুনস্টার জুট মিলের সামনে ‘লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি গ্রুপ চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনও অংশ নেন। তিনি দাবি করেন, শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তায়নে তাঁর তিলে তিলে গড়া রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আমজাদ হোসেন সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকেরও সাবেক চেয়ারম্যান। ৫ আগস্টের পর ভারতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আটক হয়েছিলেন এই শিল্পপতি। তাঁর বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ পাচার ও বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকার ঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা রয়েছে।
লখপুর গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাটকল, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সিরামিকসহ ১৭টি শিল্পকারখানা রয়েছে গ্রুপটির। গত আওয়ামী সরকারের রোষানলে এর সবগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরা বলেন, আওয়ামী দুঃশাসন, চাঁদাবাজি, দখলদারি ও রোষানলে পড়ে গ্রুপটির ব্যবসায়িক নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রুপভুক্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব মিথ্যা অভিযোগ ও আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।
গ্রুপের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় তাঁদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা তুলে ধরে পুনরায় এগুলো চালু এবং কাজ নিশ্চিতের দাবি জানান।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য, লখপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শুরু করেন। এরপর একে একে ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রুপের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু ২০১২ সালের দিকে ক্ষমতাসীন শেখ পরিবারের নির্দেশে ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। তাঁরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে হয়রানি শুরু করেন।
২০১৬ সালে মোংলা কাস্টম হাউসের ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে গ্রুপের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে লখপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সাম্যের সরকার এসেছে। এই সরকার যদি স্থগিত করে রাখা ব্যাংক হিসাব খুলে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে আবারও প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব হবে।