অগ্নি নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ, বসছে পানির রিজার্ভার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে পানির রিজার্ভার তৈরি করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে তৈরি করা হচ্ছে আড়াই লাখ গ্যালন আয়তনের পানির একটি রিজার্ভার। ডিপোজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম। সে সঙ্গে থাকবে অত্যাধুনিক ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে ৩৪ শতাংশের বেশি কর্মীকে। ফায়ার সেফটি প্ল্যান অনুসারে এসব করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিপোটির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।

গত ৪ জুন রাতে ডিপোটিতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ৫৩ জন নিহত হন। ডিপোতে থাকা বিভিন্ন পণ্যভর্তি কনটেইনারে আগুন জ্বলতে থাকে অন্তত ১০ দিন। তখন পানির সংকটের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। ডিপোর ভেতরে পানির রিজার্ভার না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের আশপাশের পুকুর থেকে পানি এনে ডিপোর আগুনে ছিটাতে হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ডিপোর ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত পুরোনো কার্যালয় এলাকায় পানির রিজার্ভারের জন্য খোঁড়া গর্তের তলায় ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া পুরো ডিপোর সীমানাদেয়ালের গায়ে ফায়ার হাইড্রেন্টের পাইপ বসানোর জন্য অ্যাঙ্গেল লাগানো হয়েছে। এখন যেখানে পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হচ্ছে, তার সামনেই (পশ্চিম পাশে) প্রথম বিস্ফোরণটি হয়েছিল।

ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়, রিজার্ভারটির দৈর্ঘ্য ৩৫ মিটার, প্রস্থ ১৬ মিটার ও গভীরতা ৩ মিটার। গত ৪ আগস্ট ফায়ার হাইড্রেন্ট ও রিজার্ভার তৈরি শুরু হয়েছে। কাজটি শেষ হবে ২০ সেপ্টেম্বর। রিজার্ভার ট্যাংকে পানির ধারণক্ষমতা আড়াই লাখ গ্যালন (১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫২২ দশমিক ৫ লিটার)। এ ছাড়া আড়াই লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি পানির ট্যাংক আগে থেকে আছে।

ডিপোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কাছে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেফটি প্ল্যানের অংশ হিসেবে তারা তাঁদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় পানির রিজার্ভার ও ফায়ার হাইড্রেন্টসহ পানির পাম্প।

ডিপোর সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বর্তমান কর্মীর সংখ্যা ৩৫০ জন। ফায়ার সেফটি প্ল্যান অনুসারে ১৮ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। তবে ইতিমধ্যে তাঁরা ১২০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন। প্রথম ধাপের ৪০ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আরও ৮০ জন প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় আছেন।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডিপো কর্তৃপক্ষ সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন শেষে ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাঁরা আবার পরিদর্শনে যাবেন। এরপর প্রশিক্ষিত কর্মীদের দিয়ে মহড়া করবেন। মহড়া শুরু হতে আরও ছয় মাস লাগতে পারে বলে জানান তিনি।

ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর কনটেইনার প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ করে দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিপোর আংশিক কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে দুটি শর্ত বেঁধে দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। একটি হলো পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হবে। অন্যটি হলো কাছাকাছি কোনো ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে।