গোলচত্বরে নেই পদচারী সেতু, পারাপারে ঝুঁকি

চাষাঢ়া গোলচত্বরে এসে মিলেছে কয়েকটি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সড়ক। আশপাশে আছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পদচারী–সেতু না থাকায় ব্যস্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এক দম্পতি। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া গোলচত্বর। জেলার প্রধান চারটি আঞ্চলিক মহাসড়ক এই গোলচত্বরে এসে মিলেছে। স্থানীয় দুটি সড়কও যুক্ত হয়েছে গোলচত্বর এলাকায়। ব্যস্ততম সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে মালবাহী কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, বাসসহ শত শত যানবাহন। গোলচত্বরটি পারাপার হন শিশু-নারীসহ হাজারো পথচারী। কিন্তু ব্যস্ততম এই গোলচত্বর পারাপারে নেই কোনো পদচারী–সেতু বা আন্ডারপাস। ফলে সেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত ২৪ জুলাই ফতুল্লার বিসিকে একটি পোশাক কারখানায় আগুন নেভাতে যাওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চাষাঢ়া গোলচত্বরে ঘটা দুর্ঘটনায় পথচারী, চালকসহ চারজন নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। আহত ব্যক্তিদের গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহত পথচারী শাহাবুদ্দিন ছিলেন শহরের জামতলা এলাকার মোনালী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মকর্তা। তাঁর ভগ্নিপতি আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, চাষাঢ়া মোড়ে পদচারী–সেতু বা আন্ডারপাস থাকলে শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু না–ও হতে পারত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষাঢ়া গোলচত্বরে মিশেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক এবং নগরের প্রধান বঙ্গবন্ধু সড়ক। এ ছাড়া চাষাঢ়া বালুর মাঠ সড়ক ও ভাষাসৈনিক সামসুজ্জোহা সড়ক যুক্ত হয়েছে।

চাঁদনী আক্তার নগরের চাষাঢ়া বালুমাঠ এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইসিজি টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি করেন। তাঁর বাসা শহরের আল্লামা ইকবাল রোড এলাকায়। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার চাষাঢ়া গোলচত্বর হয়ে আসা–যাওয়া করেন। তিনি বলেন, এখানে সড়ক পারাপার হতে খুব ভয় কাজ করে। কখন গাড়ি শরীরের ওপর উঠিয়ে দেয়। ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যাতায়াত ও বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনা–নেওয়া করতে হয়।

নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া গোলচত্বরের ২৫০ গজ দূরত্বের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ, কেয়ার স্কুল, বেইলি স্কুল নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারখানেক শিক্ষার্থী আসা–যাওয়া করে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হলে নগরের চাষাঢ়া গোলচত্বর অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু চাষাঢ়া গোলচত্বরটি পারাপার পথচারীদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

চাষাঢ়া গোলচত্বরে সড়ক পারাপারে স্কুল-কলেজশিক্ষার্থীসহ পথচারীর সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে গাড়ির চাপও বেশি। পদচারী–সেতু বা আন্ডারপাস না থাকায় বিশৃঙ্খলভাবে তাঁরা সড়ক পারাপার হন। এতে পথচারীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ইমরান হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এখানে পদচারী–সেতু বা আন্ডারপাস জরুরি প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। একটি ঘটনা ঘটলে সেটি নিয়ে কয়েক দিন উত্তাপ থাকে, পরে আমরা তা ভুলে যাই। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে একটি পদচারী–সেতু বা আন্ডারপাস করা খুবই দরকার।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ট্রান্সপোর্টের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ পাওয়া যাবে। মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ মোতাবেক পথচারী পারাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’