সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নয়, গ্যাস ছেড়ে রাখায় আগুনের সূত্রপাত

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত পাঁচ রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর গ্যাসের সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হয়েছে বলা হলেও পরে তদন্তে দেখা গেছে, সেখানে আদৌ কোনো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ব্যবহারের পর গ্যাসের সিলিন্ডারে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট গ্যাস ছেড়ে দিয়েছিলেন সফি আলম (২৪) নামের এক রোহিঙ্গা। ওই গ্যাস বাতাসে মিশে আশপাশের অন্তত আরও চারটি কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। ওই কক্ষগুলোয় তখন গ্যাসের চুলায় রান্না চলছিল। এতে মুহূর্তের মধ্যে পাঁচটি কক্ষে ও সামনের বারান্দায় আগুন ধরে যায়। আর তখন ৫ শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হন।

গত শনিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ভাসানচর থানার পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সফি আলম নামের এক রোহিঙ্গা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর অসচেতনতার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় তিনি নিজেও দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে সফি আলমের দুই সন্তান মোবাশ্বিরা (৩) ও রবি আলমও (৫) আছে। একই ক্লাস্টারের আজিজুল হকও হারিয়েছেন তাঁর দুই সন্তান মো. সোহেল (৫), মো. রাসেলকে (৪)। আর আবদুস শুক্কুর হারিয়েছেন মেয়ে রুসমিদাকে (৩)। রুসমিদা মারা গেছে গতকাল বুধবার রাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দগ্ধ হওয়া পাঁচ শিশুরই মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জোবায়দা (২২) ও আমেনা খাতুন (২৪) নামের দুই নারী। এর মধ্যে আমেনা খাতুনের শরীরের ৮ শতাংশ ও জোবায়দার ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আর সফি আলম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁকে সেখান থেকে ভাসানচরের ২০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বশির উল্যাহ (১৭) নামের আরও একজন। তবে তাঁর অবস্থা ততটা গুরুতর নয়।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮১ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা সফি আলমের গ্যাসের সিলিন্ডার পরিবর্তনের নির্ধারিত তারিখ ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। নতুন গ্যাস নেওয়ার জন্য সফি আলম তাঁর গ্যাস সিলিন্ডার খালি করতে গিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি অবশিষ্ট গ্যাস ছেড়ে দেন। ওই গ্যাস থেকেই আগুনের সূত্রপাত।

ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের (আরআরআরসি) উপসচিব মো. মাহফুজের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ৫ শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর তাঁরা এরই মধ্যে প্রতিটি ক্লাস্টারের গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলার ব্যবহারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। যার অংশ হিসেবে ক্লাস্টারে বসবাসকারীদের নিয়ে সচেতনতামূলক বৈঠক, মসজিদের মাইকে সচেতনতামূলক ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে।

ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওসার আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে পাঁচ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ নূর বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলায় সফি আলমকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি নিজেই অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় তাঁকে আপাতত গ্রেপ্তার না করে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।