আধিপত্য নিয়ে বিরোধে হামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য নিহত

মাগুরা জেলার মানচিত্র

মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত এক সদস্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে সাতটার দিকে শ্রীপুর উপজেলার কাজলী মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. রাশিদুল মোল্লা (৫৫)। তিনি শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত কাওসার মোল্লার ছেলে। কয়েক বছর আগে বিজিবির সিপাহি পদ থেকে অবসরে যান তিনি।

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের ভাষ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজলী বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন রাশিদুল। পথে কাজলী মধ্যপাড়া রাজ্জাক মোল্লার বাড়ির সামনে পৌঁছলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুই সপ্তাহ ধরে দুটো পক্ষের উত্তেজনা চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মাধ্যমে বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হয়েছিল। তবে পুলিশ কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি।

মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির মাথা, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত দেখা গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাশিদুলের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

রাশিদুলের চাচাতো ভাই মো. মামুন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, হামলার খবর পেয়ে লোকজন এগিয়ে গেলে তাঁদের ওপরও চড়াও হয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় আহত আটজনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাবেক মেম্বার (ইউপি সদস্য) হান্নান মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, ঠান্ডু মুন্সী ও তাঁদের লোকজন হামলা চালান। এর আগেও তাঁরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে সব্দালপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হান্নান মোল্লা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় আবদুল হাই পবনের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় আমার লোকজন তাঁদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মারামারি বাধানোর পাঁয়তারা করে আসছিলেন।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় দুটি সামজিক দলের একটির নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য হান্নান মোল্লা আর অন্যটি মাতবর আবদুল হাই। নিহত রাশিদুল মোল্লা আবদুল হাই পবনের অনুসারী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

আবদুল হাইয়ের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একই পক্ষের নেতাদের একজন আইনজীবী হারুন-অর-রশীদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে দুটো পক্ষের উত্তেজনা চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মাধ্যমে বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হয়েছিল। তবে পুলিশ কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। এখন একজন খুন হয়ে গেল।

ঘটনাস্থল থেকে মাগুরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দীন আল আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে জানা গেছে, দুই পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এখন এলাকা জনমানব শূন্য। তারপরও অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করনছে কেউ কেউ। তবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে।