পেশা বদল হয়, তবে ভাগ্য বদলায় না পরিতোষের

লেবু সাজিয়ে বসেছেন পরিতোষ তরাত। মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পরিতোষ তরাত (৬৫) অভাব থেকে মুক্তি পেতে একের পর এক পেশা বদল করেছেন। তবে ভাগ্যের খুব বদল হয়নি। দারিদ্র্য থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেননি। চার সদস্যের পরিবারের সবার ভাত-কাপড়ের জোগান দিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে তাঁর।

শারীরিক প্রতিবন্ধী পরিতোষ। ছোট এক পা ও ছোট এক হাত নিয়ে কাঠের আসবাবে রং–বার্নিশের কাজ করতেন। শরীরে কুলাচ্ছিল না বলে তা ছাড়তে হয়েছে। ফুটপাতে বসে দৈনিক খবরের কাগজ বিক্রি করেছেন। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলত না। এখন রাস্তার পাশে বসে লেবু বিক্রি করছেন। তবে পুঁজির অভাবে এই ব্যবসাতেও সুবিধা করতে পারছেন না পরিতোষ।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা এলাকার শমসেরনগর সড়কের এক পাশে পরিতোষ লেবু সাজিয়ে বসে ছিলেন। সঙ্গে এক-দুই হালি ডিম। প্রায় প্রতিদিন এ রকমই বসেন তিনি। হঠাৎ এক-দুজন ক্রেতা আসেন। দিন শেষে যে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা টাকা আয় হয়, তা দিয়েই টেনেটুনে সংসারটাকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন।

আলাপে আলাপে পরিতোষ তরাত বলেন, তাঁর আদি বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সাঁটিয়াতে। অনেক দিন ধরে তিনি মৌলভীবাজার শহরে থাকেন। এখন থাকেন শহরের সৈয়ারপুর এলাকার শ্মশানঘাটসংলগ্ন একটি বাসায়। তাঁর বয়স যখন ১২ বছর, তখন টাইফয়েডে তাঁর বাঁ পা ও ডান হাত ছোট হয়ে যায়। কিন্তু পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে এই প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে তাঁর ঘরে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। কাজে নামতে হয়েছে।

পরিতোষ আরও বলেন, সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে সিলেটের একটি কলেজে অনার্সে পড়ছেন। মেয়ে পড়ছেন উচ্চমাধ্যমিকে। এক বোন ও বোনের ছেলের সহায়তায় তাঁর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছেন। প্রায় ১৫ বছর পত্রিকা বিক্রির কাজ করেছেন। তবে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। ছয় থেকে সাত মাস ধরে আর পত্রিকা বিক্রি করেন না। এখন তিনি খুচরা লেবু বিক্রেতা। সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে চৌমোহনা এলাকায় আসেন। রাত আটটা পর্যন্ত রাস্তার পাশে বসে লেবু বিক্রি করেন। আড়ত থেকে বাকিতে লেবু আনেন। বিক্রি করে পরের দিন সকালে সেই টাকা পরিশোধ করেন। লেবুর সঙ্গে কিছু কলা, ডিম, পেঁপেও রাখেন। মাঝেমধ্যে নাগামরিচ, সাতকড়াও বিক্রি করেন। দিনে গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার জিনিস বিক্রি করতে পারেন।

পরিতোষের লেবুর ঝুড়ির পাশ দিয়ে ব্যস্ত শহরের যানবাহন এদিক-ওদিক আসা-যাওয়া করছে। সবাই ছুটছে। কিন্তু তিনি যেন এক স্থবির সময়ের কাছে বন্দী। বারবার চেষ্টা করেও তিনি অভাব নামের বন্দিত্বটাকে ভেঙে বের হতে পারছেন না। বলছিলেন, ‘খুবই কষ্ট করি চলরাম। এখন আর চলতাম পাররাম না।’