পটুয়াখালীতে নড়বড়ে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

পটুয়াখালীর দুমকির আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া খালের ওপর লোহার সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত রোববার সকালেছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া খালের ওপর লোহার সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুর কংক্রিটের পাটাতন ভেঙে পড়ছে। মানুষেরা পারাপারের সময় সেতুটি দুলছে। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে। 

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির পূর্ব প্রান্তের পাটাতনগুলো ভেঙে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। কিছু পাটাতন দেবে কাত হয়ে রয়েছে। কিছু কিছু পাটাতন ক্ষয়ে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে। এরপরও সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করছেন। জলিসা গ্রামের মোশারফ হোসেন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই কিন্তু শিশুরা সেতু পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। শুধু শিশুরাই নয়, গ্রামবাসীও এই সেতু পার হয়ে জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয় মানুষেরা বলেন, আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া খালের পূর্ব পাড়ে জলিসা গ্রাম এবং পশ্চিম পাড়ে দাসপাড়া হয়ে উপজেলা সদর ও জেলা শহরের যাতায়াতের সহজ পথ। এ ছাড়া পশ্চিম পাড়ে রয়েছে দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জলিশা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জলিশা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিশু-কিশোর পড়ে। দাসপাড়া খাল পার হয়ে তাদের বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। 

আগে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ধান, চালসহ অন্য শস্য ছোট ছোট রিকশা-ভ্যানে করে সেতু পার হয়ে হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু সেতু বেশ কিছু অংশের পাটাতন ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এখন রিকশা, ভ্যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পায়ে হেঁটে যাতায়াতও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

জসিম উদ্দিন ফকির জানান, ইতিমধ্যে সেতুটি পারাপার করতে গিয়ে কয়েকটি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাটাতনের ফাঁকে পা পড়ে আহত হচ্ছেন পথচারীরা। আর শিশুশিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় থাকেন। তাঁরা দ্রুত সেতুটি মেরামতের আহ্বান জানান। 

আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বলেন, এই সেতু এলাকা থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহর। লোহার এই সেতুর সরু হওয়ায় ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল ছাড়া বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এখন তো সেতুর পাটাতন ক্ষয়ে গেছে। এ পথ দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইউনিয়নের জলিসা, দাসপাড়া এলাকার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে উপজেলায় একাধিক মাসিক উন্নয়ন সভায় আলোচনা হয়েছে। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) দুমকি উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৭-৮৮ সালে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জলিশা দাসপাড়া খালের ওপর সেতুটি নির্মিত হয়। ৪০ ফুট লম্বা এবং ৮ ফুট প্রস্থের এই সেতু ওপরের কংক্রিটের পাটাতন। সেতু নির্মাণের পর আর সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। কংক্রিটের পাটাতন ভেঙে পড়ছে। 

এলজিইডির দুমকি উপজেলার প্রকৌশলী মো. জগলুল হাসান বলেন, ওই সেতুর অবস্থা সম্পর্কে তাঁরা জানেন। সেতুটি ওই এলাকার মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রকল্পের আওতায় এসে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।