যশোরে যুবলীগ নেতা হত্যায় ‘জড়িত’ দুজন ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় আটক

যশোরে হত্যার শিকার যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমানছবি: সংগৃহীত

যশোরে যুবলীগের নেতা জিল্লুর রহমান ওরফে শিমুলকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হত্যার ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া ওই দুজনকে সারা রাত অনুসরণ করে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে আটক করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের সদস্যরা।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত পৌনে নয়টার দিকে সহযোগী আমির হোসেনের বাইসাইকেলের পেছনে বসে বাড়িতে ফিরছিলেন জিল্লুর। বাড়ির অদূরে পৌঁছালে স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম (২৭) ও বুলবুল (৫০) পথরোধ করে জিল্লুরকে পেছন থেকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় বাইসাইকেলের চালক আমির হোসেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা সটকে পড়েন। আমির ও জিল্লুরের চিৎকারে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আজ লাশটি পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জিল্লুর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি ইউনিয়নের ৮ ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। তিনি গোবিলা গ্রামের মোকলেচুর রহমানের ছেলে। আটক দুজনও একই গ্রামের বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাইসাইকেলের চালক আমির হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে নাঈম ও বুলবুলের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। জিল্লুরকে কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়। আমরা তাদের পিছু নিই। ঝিনাইদহ থেকে তারা তাদের মুঠোফোন বন্ধ করে দেয়। এরপর তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সারা রাত তাদের পিছু নিয়ে অবশেষে সকালে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে আটক করা হয়েছে।’ তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড এখনই বলতে চান না পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।

গ্রামের বাসিন্দারা এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, যুবলীগের নেতা জিল্লুরের সঙ্গে বুলবুলের সখ্য ছিল। সে সূত্রে বুলবুলের স্ত্রীর সঙ্গে জিল্লুরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি বুলবুল জানতে পারলে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গত মঙ্গলবার রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে জিল্লুর নিজের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলের হেডলাইট না জ্বালানোকে কেন্দ্র করে বুলবুল, নাঈমসহ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জিল্লুরকে হত্যার হুমকিও দেন তাঁরা।

হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গেছে। তবে এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা স্পষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পরকীয়ার একটি যোগসূত্র পেয়েছেন। আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে নিহত জিল্লুরের স্ত্রী নাসিমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে স্থানীয় বুলবুল, বিল্লাল, নাঈম, সোহরাব, শিমুল ও মনিরুলের সঙ্গে জিল্লুর রহমানের দ্বন্দ্ব চলছিল। তাঁরা জিল্লুরকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

এ বিষয়ে ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র আমরা এখনো খুঁজে পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত জিল্লুর রহমান চূড়ামনকাঠি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি করেন। দাউদ হোসেনের সঙ্গে এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের নির্বাচনী দ্বন্দ্ব রয়েছে। দুজন আবার জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার অনুসায়ী হিসেবে পরিচিত। জিল্লুর রহমান একসময়ে আবদুল মান্নানের সঙ্গেই থাকতেন। গত ইউপি নির্বাচনের সময়ে আবদুল মান্নানের সঙ্গ ত্যাগ করে দাউদ হোসেনের পক্ষে নির্বাচন করেন। বিষয়টি নিয়েও প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে জিল্লুর রহমানের দ্বন্দ্ব ছিল।