ফলাফল না আসায় বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করল ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয় ফটকে তালা ঝুলিয়ে বাইরে অবস্থান নেয় ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিকেলে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বিজবাগ নবকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় ৪৩ জনের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফলাফল না আসায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষে ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। উপজেলার বিজবাগ নবকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয়ে আজ সোমবার বেলা একটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশ্বাসে তালা খুলে দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও ফলপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলাকালে বিজবাগ নবকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ৪৩ জন শিক্ষার্থী ১৪ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্টের খাতা জমা দিয়েছিল। কিন্তু বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বোর্ডে ১৩ বিষয়ের নম্বর পাঠানো হয়েছে। এ কারণে বোর্ড থেকে একই বিদ্যালয়ের এসএসসি সাধারণ শাখার শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হলেও ভোকেশনাল শাখার ৪৩ শিক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুর ১২টায় এসএসসি ফলাফল ঘোষণার পর ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল না দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী বাজার থেকে তালা কিনে এনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অফিসকক্ষের দরজায় ও ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফলের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা কক্ষের ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে সেনবাগ থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের স্থগিত ফলাফল প্রকাশের আশ্বাস দেওয়ার পর বিকেল পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেয়।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ফলাফল নিয়ে জটিলতার বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ আগেই জানতেন। তাই তিনি আজ সোমবার ফলাফল ঘোষণার দিন বিদ্যালয়ে আসেননি। তাঁর (প্রধান শিক্ষক) ভুলের কারণেই তাদের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। পরে কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসএসসি ভোকেশনাল শাখা চালু হয়েছিল ২০২০ সালে। ওই বছরই প্রথম ব্যাচের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৪ বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্টের মধ্যে ১৩ বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বাকি এক বিষয়ের নম্বর না পাঠানোর কারণে বোর্ড থেকে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ফলাফল জটিলতা নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। দুই মাসের মধ্যে স্থগিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হতে কোনো সমস্যা হবে না। ইউএনও বলেন, বিষয়টি কয়েক দিন আগেই প্রধান শিক্ষক জেনেছেন। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে, তবু শিক্ষার্থীরা অন্যদের ফলাফল প্রকাশিত হতে দেখে মন খারাপ করে বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।