জামালপুরে ষাঁড়ের মই দৌড় দেখতে মানুষের ঢল

ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মুসলিমাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের মাদারগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। গতকাল বৃহস্পতিবার শীতের পড়ন্ত বিকেলে উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ এলাকায় এই খেলা দেখতে আশপাশের হাজারো মানুষ ভিড় করেন। খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

প্রতিবছর শীতের এই সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ খেলায় চারটি করে ষাঁড় একত্রে মইয়ের সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। পরে মইয়ের ওপর দুজন ব্যক্তি উঠে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দৌড় শুরু করে। যে দল আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সেই দল হয় প্রথম।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মই দৌড় খেলাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানাতে গতকাল বিকেলে মুসলিমাবাদ এলাকার মাঠে গ্রামবাসী ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ মাঠে মানুষের পদচারণে মুখর হয় পুরো এলাকা। চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশুর উল্লাসধ্বনিতে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

প্রতিযোগিতায় ১৪টি দল অংশ নেয়
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিযোগিতায় ১৪টি দল অংশ নেয়, যার মধ্যে খেলায় প্রথম হয়েছে নূরনবী মণ্ডলের দল। দ্বিতীয় হয়েছে হেলাল উদ্দিন ও তৃতীয় হয়েছে আবদুল বারেকের দল। প্রথম পুরস্কার হিসেবে ছিল রেফ্রিজারেটর। দ্বিতীয় পুরস্কার এলইডি টিভি ও তৃতীয় পুরস্কার ছিল বড় বড় হাঁড়ি-পাতিল।

খেলা দেখতে আসা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার বলে, ‘এই মই দৌড় খেলা সম্পর্কে বাবা-দাদার কাছ থেকে শুধু গল্প শুনেছি। আগে কখনোই দেখিনি। আমার জীবনের প্রথম এ খেলা দেখলাম। খেলা সম্পর্কে তেমন ধারণাও ছিল না। খেলা দেখলাম খুবই ভালো লাগল।’

গুনারীতলা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, এ খেলার খবর অনেক আগে থেকেই এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। দুপুরের পর এই মাঠে চলে আসেন তিনি। তাঁর মতো হাজারো মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। বড় বড় ষাঁড় দিয়ে প্রতিটি দল তৈরি করা হয়েছে। একসঙ্গে সব দল দৌড় দেয়। সত্যিই খুব ভালো লেগেছে।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান বলেন, মই দৌড় প্রতিযোগিতা গ্রামবাংলার শত বছরের পুরোনো একটি খেলা। আগে সবচেয়ে বেশি এই প্রতিযোগিতা হতো। এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তরুণ প্রজন্মকে এই খেলা সম্পর্কে জানাতে এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষকে কিছুটা বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা থেকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করার চেষ্টা করা হবে।