মারিয়ার কৃতিত্বের বিনিময়ে সেতু চান এলাকাবাসী

মারিয়ার বাড়ি উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে। মন্দিরকোনা গ্রামে।

মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মারিয়া মান্দা
ছবি: প্রথম আলো

খরস্রোতা নেতাই নদ। সেতু বা সাঁকো নেই। খেয়াঘাটে একটি নৌকা থাকলেও নেই কোনো মাঝি। নদীর প্রস্থে দুই পাড়ে বাঁধা দড়ি টেনে টেনে নৌকায় নেতাই নদী পার হয়ে খেলার জন্য মারিয়াকে যেতে হতো কলসিন্দুর খেলার মাঠে।

ওই মারিয়া এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি এখন এলাকাবাসীর গর্ব ও অহংকার।

মারিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর স্কুল থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে। মন্দিরকোনা গ্রামে। গত মঙ্গলবার দুপুরে মন্দিরকোনা গ্রামে নেতাই নদের পাড়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ, শিশু ও কলসিন্দুর স্কুলের শিক্ষার্থীরা দড়ি টেনে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারপার হচ্ছে।

কলসিন্দুর, মন্দিরকোনা ও পঞ্চনন্দপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় খেয়াঘাটে। তাঁরা জানান, নেতাই নদের সেতু না থাকায় বছরের পর বছর ধরে মানুষের এমন দুর্ভোগ। ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা নেতাই নদ বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে খুব বেশি খরস্রোতা হয়ে ওঠে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় ঘাটে বেঁধে রাখা নৌকা স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

কলসিন্দুর, মন্দিরকোনা ও পঞ্চনন্দপুর গ্রামবাসীর দাবি, কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে বিদু৵ৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই বিদুতের কারণে গ্রামের হাজারো মানুষ উপকৃত হয়েছিলেন। এবার সেই মারিয়ার কৃতিত্বের বিনিময়ে কলসিন্দুর ঘাটে একটি সেতুর দাবি গ্রামবাসীর।

মন্দিরকোনা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের জন্য নানাভাবে বদলে গেছে আমাদের এলাকা। এবার আমরা একটি সেতু চাই। যদিও কলসিন্দুর থেকে দুই কিলোমিটারের বেশি দূরে চারুয়াপাড়া এলাকায় নেতাই নদে একটি সেতু রয়েছে, কিন্তু আমাদের গ্রাম থেকে ওই সেতু পর্যন্ত যাওয়ার কোনো সড়ক নেই। আগে নেতাই নদের পাড় ধরে সড়ক থাকলেও নদীভাঙনের কারণে সেই সড়ক দিয়ে এখন চলাচল করা যায় না।’

মোজাম্মেল হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, কলসিন্দুর ঘাট দিয়ে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ পারাপার হন একটি মাত্র নৌকা দিয়ে। বর্ষাকালে প্রায়ই নৌকা স্রোতের টানে ভেসে চলে যায়। একটি সেতু করা হলে মানুষের চলাচল সহজ হয়ে যেত।

ফুটবলার মারিয়া মান্দার মা ছিলনি মান্দা বলেন, ‘সেতু না থাকায় আমাদের কষ্টের কথা বলতে গেলে অনেক স্মৃতি মনে আসে। মারিয়া যখন ফুটবল খেলতে ঢাকায় যাওয়া শুরু করে, তখন মাঝেমধ্যে ছুটি পেয়ে ঢাকা থেকে ফিরতে রাত হয়ে যেত। সন্ধ্যার পরপর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। শীতের রাতে এমনও হয়েছে, মারিয়া ঢাকা থেকে এসে নদীর কলসিন্দুর স্কুলের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু নৌকা নেই। আমি নদী সাঁতরে দূর থেকে নৌকা নিয়ে এসে ওকে পার করেছি। এ রকম আরও অনেক মানুষের কষ্টের কথা আছে। এখানে সেতু হলে মানুষের খুব উপকার হবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে কলসিন্দুর ঘাটে সেতু হওয়ার সুযোগ নেই। নিয়মে আছে, পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি বেশি সেতু হবে না। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-ধোবাউড়া সড়কের ধোবাউড়ায় তিনটি ঝুলন্ত সেতু বেহাল। আমরা সে তিনটি স্থানে পাকা সেতুর জন্য আবেদন দিয়েছি।’