জাহাঙ্গীরনগরে সাংবাদিক মারধরের এক মাসেও বিচারকাজ শেষ হয়নি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারকাজ শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ১২ দিন পরও শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা হয়নি। শৃঙ্খলা বোর্ড তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে সিন্ডিকেটে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে উপাচার্যের বিবেচনায় উত্থাপিত অভিযোগের শাস্তি দিতে তিনি প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টোরিয়াল বডি, এক বা একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারবেন। তিনি প্রক্টরিয়াল বডি বা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন শৃঙ্খলা বোর্ডে উপস্থাপন করে ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সাংবাদিক মারধরের ঘটনার বিষয়টি উপস্থাপন করা যায়নি। এদিকে বিচারকাজে ধীরগতির কারণে সঠিক বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত ২১ আগস্ট দিবাগত রাত দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথিকক্ষে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক বৈঠক চলাকালে কোনো সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করেছেন—এমন সন্দেহে ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি অভিযোগ করেন।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী সাংবাদিক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন ও আমিনুর সুমন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের হৃদয় রায়, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শাফায়েত হোসেন এবং চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মেহেদী হাসানের নাম উল্লেখ করেন। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে সাতজন অংশ নেওয়ার কথা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্ত সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের অনুসারী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন এজহারুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে তিন দিন সময় বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও হল প্রাধ্যক্ষকে জমা দেওয়া হয় ১০ সেপ্টেম্বর। প্রতিবেদন পেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠিয়ে দেন।

তদন্ত কমিটির সভাপতি এজহারুল ইসলাম বলেন, ‘১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন হল প্রভোস্টের কাছে জমা দিয়েছি। প্রভোস্ট সম্ভবত পরদিন তা শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠিয়েছেন। শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেবে।’

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বলেন, ‘অন্যান্য সময় মারধরের ঘটনায় প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তবে আমাকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকে সাময়িক বহিষ্কার করেনি। আমি সাংবাদিক বলেই কি প্রশাসন এমন মনোভাব দেখাচ্ছে?’

এদিকে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য নূরুল আলম শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্নের মৌখিক নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকনেতারা উপাচার্যের কাছে দ্রুত বিচারকাজ সম্পাদনের দাবি জানালে সেখানেও প্রক্টরকে সিন্ডিকেট সভার আগে বিচারকাজ সম্পন্নের নির্দেশ দেন উপাচার্য। তবে ২০ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভা হলে সেখানে বিচারকাজ সম্পন্নের জন্য শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা আহ্বান করতে পারেননি বলে জানান প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান।

ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভাটি হঠাৎ করে হওয়ায় আমরা শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা করার সময় পাইনি। এ মাসের শেষের দিকে আরেকটি সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা আছে। তার আগে এ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা করব।’