নোয়াখালীতে বিএনপির চার নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, আহত ১০

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর হাজারী ইউনিয়নে বিএনপির চার নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে আলোচিত ‘হেলমেট বাহিনী’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দুই দফায় ওই ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ওই হামলা চালানো হয়।

হামলার সময় হেলমেট বাহিনী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাহাব উদ্দিনের ৭০ বছর বয়সী মাসহ পরিবারের নারী ও শিশুদের মারধর করে। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা আনুমানিক ছয়টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত হেলমেট বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাহাব উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে এলাকার মানুষজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। প্রথম দফায় হামলাকারীরা বাড়ির পাঁচটি বসতঘরের বেড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে।

প্রথম দফায় হামলার ঘণ্টাখানেকের মাথায় তারা দ্বিতীয় দফায় ওই বাড়িতে হামলা চালায়। তখন বিএনপির নেতা সাহাব উদ্দিনের বসতঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের এলোপাতাড়ি মারধর এবং আসবাবসহ অন্যান্য জিনিস ভাঙচুর ও তছনছ করে। এ সময় তারা সাহাবের ৭০ বছর বয়সী মা ফুলজান বিবি, ভাতিজি হুমায়রা আক্তার (১০), ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নারগিস সুলতানা (৪০), ভাতিজা ওমর আলী (২০) পাঁচজনকে মারধর করে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা একই সময় চর হাজারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নুর নবী, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মো. বাবুলের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। এসব বাড়ির চারটি বসতঘর ভাঙচুর ও তছনছ করে তারা।

বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা তাঁর বাড়িতে দুই দফায় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর করেছে তাঁর বসতঘরে। তারা এ সময় তাঁর বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেছে। হামলার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পরে বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় নানা হুমকি দিয়ে গেছে।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জার নিয়ন্ত্রিত হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁর বাড়িসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার চর হাজার ইউনিয়নে চারজন বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

বিএনপির নেতা মাহমুদুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা-ভাঙচুর করা হলেও থানা-পুলিশের কাছ থেকে তারা কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না। পুলিশ তাদের কোনো কথাই শুনছে না। এতে হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে দুটি হামলার ঘটনায় তাঁরা ডাকযোগে থানায় এজাহার পাঠিয়েছেন, সেগুলোর কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি। তাই হামলার অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চর হাজারীতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়েছেন। পুলিশ এলাকায় গিয়ে হামলা-ভাঙচুরের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, বিএনপির কারও কাছ থেকে ডাকযোগে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি।