শীতের সকালে গতকাল মঙ্গলবার ১০ স্বজন মিলে ঘুরতে বের হন। পদ্মা সেতু পেরিয়ে চলে যান ফরিদপুরে। সেখানে খেজুরের রস পান করেন ও ঘোরাঘুরি শেষে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিলেন। পথে মাইক্রোবাস ও ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত হন পাঁচজন।
এই পাঁচজন হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাজিয়া সাজু (৪৫), তাঁর চাচাতো বোন ফাহমিদা শারমিন ওরফে মুন (৪০), শারমিনের স্বামী মামুন চৌধুরী ওরফে লিটন (৫০), সাজিয়ার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী আতিফা রহমান ভূঁইয়া (৩৬), তাঁদের আরেক আত্মীয় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার দড়ি সোনাকান্দার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেনের স্ত্রী উম্মে তানসুমা ওরফে রিন্তু (৩০)।
দুর্ঘটনায় আহত চারজন হলেন নিহত মামুন ও ফাহমিদা দম্পতির মেয়ে মাবিন চৌধুরী ওরফে তাজরিন (১৬), বন্দর উপজেলার অরিন (৩০), মাইক্রোবাসের চালক নাজমুল (৩৩) ও ফরিদপুরের কোতোয়ালি গেরদা এলাকার শেখ জিন্নাহ (৬০)।
গতকাল সন্ধ্যায় ভূঁইয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, নিহত ব্যক্তিরা ভূঁইয়া পরিবারের সদস্য। ভূঁইয়াদের নামেই এলাকাটির নাম। একসঙ্গে পাঁচ স্বজনের মৃত্যুর খবর শুনে স্বজন-প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করেছেন।
ভাই ও ভাবির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মামুন চৌধুরীর ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী। তিনি বলেন, তাঁর ভাই ভ্রমণপিপাসু মানুষ। সুযোগ পেলেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে যেতেন। ঘুরতে গিয়েই যে এভাবে মৃত্যু হবে, কখনো ভাবেননি তাঁরা।
মামুন চৌধুরী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য। তিনি নগরের একটি আটা-ময়দা মিল ও ফোর নিটওয়্যার লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার মালিক। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে নগরের ব্যবসায়ীদেরও বাড়িতে ভিড় করতে দেখা যায়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মামুন চৌধুরী, ফাহমিদা শারমিন ও আতিফার লাশ আনা হয় ভূঁইয়াপাড়ার বাড়িটিতে।
সাজিয়া সাজু ও উম্মে তানসুমার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বন্দরের সোনাকান্দায়। প্রিয়জনের লাশ আনার খবরে পুরো বাড়িটিতেই বিলাপের রোল পড়ে।
স্ত্রী ও স্বজনদের মরদেহ আনতে ফরিদপুর গিয়েছিলেন সাঈদ ভূঁইয়া। স্ত্রী আতিফার লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। সে কান্না কোনোভাবেই থামছিল না।
রাত ৯টার দিকে নিহত মামুন চৌধুরীর মেয়ে দুর্ঘটনায় আহত মাবিন চৌধুরীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। একসঙ্গে বাবা–মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সে।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজন আল হাসান ও মোহাম্মদ শামীম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে করে ১০ জন মিলে ফরিদপুরের উদ্দেশে বের হন। সকাল ৯টার দিকে মামুন চৌধুরী মুঠোফোনে জানান যে তাঁরা খেজুরের রস খেয়ে ফরিদপুরে ঘোরাফেরা করছেন। বিকেলের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ ফিরবেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুঠোফোনে তাদের মৃত্যুর খবর আসে। প্রাইভেট কারটি আগে রেলক্রসিং পার হয়। পেছনে থাকা মাইক্রোবাসটি রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথের মুন্সিবাজার ক্রসিংয়ে মাইক্রোবাস ও মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাইক্রোবাসটি নিচের খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।