পাতে ফিরবে হারিয়ে যাওয়া গোটালি মাছ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল সফল হয়েছেছবি: প্রথম আলো

দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে হারিয়ে যেতে বসা গোটালি মাছ ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।

সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজহার আলী বলেন, তাঁদের গবেষণাকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে মাছটি চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ফলে মাছটি আবার খাল-বিল ও নদী-নালায় পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

এই গবেষক বলেন, ইনজেকশন প্রয়োগ করার সাত–আট ঘণ্টা পর স্ত্রী গোটালি মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু বের হয়। সঠিক পরিচর্যায় ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা আঙুলি পোনায় পরিণত হয়।

গোটালি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Crossochelius latius’। সুস্বাদু এ মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় মাছের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র সূত্র জানায়, মিঠাপানির জলাশয়, পাহাড়ি ঝরনা ও অগভীর স্বচ্ছ নদী ছিল গোটালি মাছের আবাসস্থল। একসময় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও আত্রাই নদী ছাড়াও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী ও কংস, সিলেটের পিয়াইন এবং পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতেও প্রচুর পরিমাণে মিলত গোটালি মাছ। নানা কারণে গোটালির প্রজনন হুমকিতে পড়ে। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মাছটিকে বিপন্ন প্রজাতি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তালিকায় বিলুপ্ত প্রজাতির ২৬১টি মাছের নাম উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ৬৪টি মাছ দেশের নদী-নালা থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে। আর বিলুপ্ত প্রজাতি থেকে ৪১টি মাছের প্রজনন প্রযুক্তি সফল হয়েছে। সেখান থেকে ১২টি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের পোনা চাষি পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে হারিয়ে যেতে বসা গোটালি মাছ ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

স্বাদুপানি উপকেন্দ্রেটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সাল থেকে তারা গবেষণার কাজ শুরু করে। গোটালি মাছ পুনরুদ্ধারে গবেষণা শুরু হয় ২০২৩ সালে। এ গবেষণাদলে ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজহার আলী, কেন্দ্রটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সোনিয়া শারমীন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা। তাঁরা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গবেষণাগারে গোটালি মাছের পোনা উৎপাদন কৌশলে সফল হন।

গোটালি মাছের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে গবেষক মালিহা হোসেন বলেন, মাছটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিমানসমৃদ্ধ। মাছটির মাথা চ্যাপ্টা ও শরীর লম্বা আকৃতির। মাছটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১২ সেন্টিমিটার ও ওজন ১৫ থেকে ১৭ গ্রাম হয়ে থাকে। মাছটির প্রজননকাল জুন থেকে জুলাই মাস।