মজিবরের ঝালমুড়ি মন কেড়েছে অনেকের
২৯ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন শেখ মজিবর। আগে শুধু ঘুগনি দিয়ে এক পদের ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। এখন সময়ের সঙ্গে ঝালমুড়ির পদের সংখ্যা বাড়িয়েছেন; স্বাদে এনেছেন ভিন্নতা। মজিবরের অনেক পদের, অনেক স্বাদের ঝালমুড়ি মন কেড়েছে অনেকের। তাই তো প্রতিদিন তাঁর ঝালমুড়ির ঝাল স্বাদ নিতে ছুটে আসেন অনেকে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া খাজা সুপারমার্কেটের সামনের সড়কে মজিবরের ঝালমুড়ির দোকান। বিশেষ কায়দায় তৈরি দুই চাকার গাড়িতে মুড়ির ভ্রাম্যমাণ দোকানটিতে ধুলাবালু ঠেকাতে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা। এই দোকানে ঝালমুড়ি খাওয়ার সঙ্গে চলে অনেকের আড্ডা। তৃপ্তি নিয়ে ফেরেন ভোজনরসিকেরা।
প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৮ বছর বয়সী মজিবর ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। ঝালমুড়ির পদগুলোর মধ্যে আছে—আলু ঝালমুড়ি, ছোলা ঝালমুড়ি, ডিম ঝালমুড়ি ও চিকেন ঝালমুড়ি। প্রতিদিন পাঁচ–সাত কেজি মুড়ি বিক্রি হয় তাঁর। মুড়িতে ঝাল নিশ্চিত করতে প্রতিদিন দুই কেজির বেশি মরিচ ও ২০–৩০টি বোম্বাই মরিচ লাগে তাঁর। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি। অনেকে মজিবরের ঝালমুড়ি খাওয়ার পাশাপাশি নিয়ে যান পরিবারের জন্য। এ ছাড়া শহরে কেনাকাটা করতে আসা লোকজনও মজিবরের ঝালমুড়ি খেয়ে যান।
বুধবার রাতে ঝালমুড়ির দোকানে কথা হয় মজিবরের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যাঁরা ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তাঁরা ঝালমুড়ি খেতে আসেন। অনেক ঝাল খাওয়ার মানুষ আছেন। কেউ কেউ একটা বোম্বাই মরিচ, কেউ চার-পাঁচটা কাঁচা মরিচ খেয়ে ফেলেন। কম ঝাল খাওয়া মানুষও মুড়ি খেতে আসেন। তাঁদের জন্য কম ঝাল দিয়ে মুড়ি তৈরি করেন মজিবর।
মুড়ি খেতে আসা তনু হক বলেন, ‘মজিবরের ঝালমুড়ির আলাদা স্বাদ রয়েছে। এটি মুখরোচক খাবার, স্বাদের ভিন্নতার জন্য সুযোগ পেলেই ঝালমুড়ি খেতে ছুটে আসি। ছোলার ঝালমুড়ি অনেক মজা লাগে।’ অপর ক্রেতা মো. জুয়েল বলেন, ‘সাত বছর ধরে মজিবরের ঝালমুড়ি খাই। প্রতিদিন কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে মজিবরের ঝালমুড়ি খাই। ঝালমুড়ি খেতে পছন্দ করি। খেতে ভালো লাগে। এটা খুব মজাদার।’
নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকায় সাড়ে ৯ হাজার টাকার ভাড়াবাসায় থাকেন মজিবর। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায়। ১৯৮৮ সালে পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে আসেন তিনি। ১৯৯৪ সালে শুরু করেন ঝালমুড়ির ব্যবসা। শুরুর দিকে দিনের বেলায় মৌসুমি ফল বিক্রি করতেন মজিবর। বিকেলের পর বিক্রি করতেন ঝালমুড়ি।
নিজে নিজেই ঝালমুড়ি তৈরির কৌশল শিখেছেন জানিয়ে মজিবর বলেন, ‘শুরুতে নিজেই মুড়ির মসলা তৈরি করতাম। মুড়ি খেতে আসা লোকজন পরামর্শ দিলে সেগুলো গুরুত্ব দিতাম এবং ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী মুড়ি তৈরি করি। ধীরে ধীরে ঝালমুড়ি ব্যবসার চাহিদা ও সুনাম বাড়ে।’
ঝালমুড়ি তৈরির মসলা, ডিম, আলু, ঘুগনি, ছোলা ভুনাসহ অন্যান্য জিনিস তৈরির কাজে মজিবরকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী তানজিলা বেগম। তাঁদের সংসারে তিন সন্তান। প্রতিদিন পাঁচ–ছয় হাজার টাকার মুড়ি বিক্রি করেন মজিবর।
ব্যবসা শুরুর দিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মজিবর বলেন, আগে এক টাকা থেকে পাঁচ টাকায় মুড়ি বিক্রি করতেন। সে সময় পাঁচ টাকায় খুব কম মানুষ ঝালমুড়ি খেত। মুড়ির কেজি ছিল ১৬ টাকা, ছোলা ছিল ১৩ টাকা কেজি এবং সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ২৮ টাকা। এখন সব জিনিসের দাম তিন–চার গুণের বেশি বেড়েছে।
বর্তমান বাজারদর মজিবরের মুড়ি ব্যবসায়ও প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘এখন এক কেজি ছোলা ৯০ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা কেজি, সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। এ ছাড়া মসলাসহ অন্যান্য জিনিসের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস–সংকটের কারণে আলাদা করে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়। তাই মুড়ির দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন চাইলেও কম দামে মুড়ি বিক্রি করতে পারি না।’
জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে সংসারের খরচ বেড়েছে বলে জানান মজিবর। ফলে দৈনিক হাজার–বারো শ টাকা আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আগে আয় কম করতাম, কিন্তু সংসার সুন্দরমতো চলে যেত। এখন আয় বাড়লেও সংসারের খরচ বেড়েছে অনেক। আগের সময়ের তুলনায় বেশি আয় করলেও খরচের সঙ্গে হিসাব মেলাতে পারি না।’