রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

রাজশাহীতে সদ্যঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর ও জেলা কমিটি বাতিল করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায়
ছবি : প্রথম আলো

রাজশাহীতে সদ্য ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর ও জেলা কমিটি বাতিল করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহী কলেজের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলটি নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এর আগে গত শুক্রবার ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট’ কমিটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আজকের মিছিলে ‘ষড়যন্ত্রের কমিটি মানি না, মানব না’, ‘অবৈধ কমিটি মানি না, মানব না’, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থীরা। বক্তব্য দেন রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম, কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবাইর রশিদ, কলেজে একই বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিউল ইসলাম, রাজশাহী সিটি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু শাকিল আকাশ প্রমুখ।

রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, কিছু স্বৈরাচারের দোসর এবং যারা অছাত্র, চালবাজ, তাদের দিয়েই আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এরা কখনো আন্দোলনেই যায়নি। যারা আন্দোলনে ছিল না, তারা কীভাবে নেতৃত্ব পায়? কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে ঢাকা থেকে দেওয়া এই পকেট কমিটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হতে পারে, কিন্তু স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা সবাই এক। স্বৈরাচারের দোসরদের দিয়ে গঠিত কমিটি রাজশাহীবাসী মেনে নেবে না। কমিটিতে প্রথম সারিতে যাদের রাখা হয়েছে, আন্দোলনে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আবার অনেকে জানেই না যে তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। যারা যোগ্য, তাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।’

রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবাইর রশিদ বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু এখন আমরা কী দেখছি, যারা জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধারণই করে না, অনেকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত, তাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, এই কমিটি কারা করে? আমরা কমিটি বাতিল চেয়ে আজকের এই বিক্ষোভ করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মারকে মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গতকাল শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এ কমিটি করার বিষয়ে তাঁদের কোনো হাত নেই। এটা কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে করেছে। আন্দোলনের মাঠে যাঁরা ত্যাগী, তাঁদেরই রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগরের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। মহানগরের মুখপাত্র আঞ্জুমান আরা হক এবং জেলার মুখপাত্র রোহানা হক এতে স্বাক্ষর করেছেন। এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটিকে বিতর্কিত করতে চাওয়া একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নানাবিধ চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। কোনোভাবেই এই ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, অনেক সহযোদ্ধার নাম এই কমিটিতে আসেনি। তাঁদের নাম দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা, বিশেষ সেল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বড় পদে রাখা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটিতে ১১৫ জন এবং রাজশাহী জেলায় ১৪৮ জনকে নিয়ে ছয় মাস মেয়াদি কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাজশাহী মহানগর কমিটিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে (তানিম) আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। অপর দিকে জেলা কমিটিতে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাহিদুল ইসলামকে (সাজু) আহ্বায়ক এবং সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থী মো. রহমতুল্লাহকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।