বরিশালে ‘মানবিক কর্মসূচি’ নিয়ে হঠাৎ প্রকাশ্যে মজিবর রহমান সরোয়ার

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার তাঁর নেতাকর্মীদের নিয়ে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। রোববার দুপুরে বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পর আবারও সক্রিয় হয়েছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তিন দিন ধরে তিনি বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় দিনে শীতার্ত ব্যক্তিদের এবং রাতে ঘুরে ঘুরে ভবঘুরে ব্যক্তিদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছেন। সঙ্গে ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহসম্পাদক আনোয়ারুল হকসহ তাঁর পক্ষের সাবেক নেতা-কর্মীরা।

তাঁর পক্ষের নেতারা বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ার আজ দুপুরে নগরের কাউনিয়া এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত আল কোরআন ফাউন্ডেশনের ব্যানারে অসহায় মানুষের মধ্যে ছয় শতাধিক কম্বল বিতরণ করেন। এর আগে গত শুক্র ও শনিবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় এক হাজার ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

সরোয়ারপন্থী নেতারা আরও বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ১৯ জানুয়ারি নগরের কাউনিয়া এলাকায় একটি বিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। সেখানে মহানগর ও জেলা বিএনপির বর্তমান নেতাদের তিনি নিজে মুঠোফোনে কল করে দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই আসেননি। গত বৃহস্পতিবার রাতের ওই অনুষ্ঠানে তাঁর পক্ষের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

২০ বছর ধরে বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন মজিবর রহমান। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ও বরিশাল সদর আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। নেতৃত্ব পান তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতারা। এরপর বরিশালের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন মজিবর রহমান। তাঁর পক্ষের নেতারাও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান না পেয়ে কোণঠাসা। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

নাম গোপন রাখার শর্তে দলের একটি সূত্র জানায়, মহানগর ও জেলা কমিটির নেতারা এখন আর চাইছেন না মজিবর রহমান বরিশালের রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। কারণ, নতুন কমিটির এই নেতাদের মধ্যে অনেকে বিএনপির টিকিটে মেয়র ও সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

মজিবর রহমান সরোয়ারের দাওয়াত পেয়েও অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো দাওয়াত পাইনি। পেলে অবশ্যই যেতাম। শুনেছি তিনি (সরোয়ার) সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে মুঠোফোনে কল দিয়ে নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু আমাকে তিনি কোনো কল দেননি।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ১৯ জানুয়ারি নগরের কাউনিয়ায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান দাওয়াত পাওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং ঢাকায় অবস্থানের কারণে যোগদান করতে পারেননি বলে জানান।

মজিবর রহমান সরোয়ার দীর্ঘদিন সভাপতি পদে থাকায় দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাঁর এখনো শক্ত অবস্থান রয়েছে। এক বছরের বেশি সময় আগে তাঁকে মহানগরের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় পর করা কমিটিতে মনিরুজ্জামান খান ওরফে ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার ওরফে বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। গত বছরের ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি।

নতুন কমিটির তিন নেতা পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির জন্য কেন্দ্রে নাম জমা দেন। এরপর গত বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩১ নেতা। তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যে গত বছরের ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এতে বঞ্চিত নেতারা দলীয় কর্মকাণ্ডে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান করেছেন, যা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। বাদ পড়া এই নেতারা মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষের হিসেবে পরিচিত।

মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৯ জানুয়ারির অনুষ্ঠানটি  ছিল আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর। সেখানে তিনি (মজিবর রহমান সরোয়ার) নিমন্ত্রণ করার পরও দলের নেতারা যোগদান না করা দলকে অবজ্ঞার শামিল।’

মজিবর রহমান সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। সবাইকে নিজে কল করে দাওয়াত দিয়েছি। এরপরও তাঁরা কেন আসলেন না, সেটা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। আয়োজনটা ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর। এখানে তো গ্রুপিংয়ের অবকাশ নেই। তাঁদের না আসাটা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক।’