নিক্সনকে বহিষ্কারের দাবি তোলার পর ভাঙ্গায় যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত

ফরিদপুরের ভাঙ্গা যুবলীগের বর্ধিত সভা। এ সভায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাহাদাত হোসেন ও মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাঁকে ও তাঁর ‘মদদদাতা’ মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানোর পর ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে জেলা যুবলীগ। পাশাপাশি ভাঙ্গা পৌরসভা এবং সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধিত সভা করে বহিষ্কারের দাবি জানায়। সভা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সন্ধ্যায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ওরফে মিঠু স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চারটি কমিটি কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনাদের বার বার নির্দেশনা দেওয়ার পরও আপনারা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এবং ফরিদপুর জেলাধীন আওয়ামী যুবলীগের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। এমতাবস্থায় আপনাদের দলীয় সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।’

সকালে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যুবলীগের বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুন অর রশিদ। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান ওরফে রাজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী হেদায়েত উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফায়জুর রহমান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম এম কামরুজ্জামান ওরফে কাফী প্রমুখ।

সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী
ফাইল ছবি

সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান ওরফে রাজা বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের দল থেকে বহিষ্কারের। ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাদাত হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তাঁকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।

আকতারুজ্জামানের দাবি, বিদ্রোহী প্রার্থী হতে সাহাদাতকে মদদ দিয়েছেন ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান। তাঁকে যুবলীগ থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘যদি তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা না হয়, তাহলে আমরা আন্দোলন শুরু করব। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অনেক জুলুম হয়েছে। তাঁদের হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়েছে। আমরা আর হামলা মামলা সহ্য করব না।’

সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান কেন্দ্রীয় যুবলীগেরও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। অপরদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সাহাদাত কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এই দুজন প্রার্থী ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে আরও দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, অধ্যাপক এম এ আজিজ ও মো. নূর ইসলাম সিকদার।

১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ওরফে নিখিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুবলীগের যে কোনো স্তরের নেতাকর্মী যদি বিদ্রোহী প্রার্থী বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে বা প্রচার প্রচারণা চালায় বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে তাঁর/তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেন্দ্রীয় এ নির্দেশনার পরও যুবলীগ নেতা সাহাদাত হোসেন ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সদরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান ও চরভদ্রাসনের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাউসার।

ভাঙ্গা যুবলীগের বর্ধিত সভা করা এবং সাহাদাত ও মজিবুর রহমানের বহিষ্কারের দাবির পর সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসার বিষয়টি কোন চোখে দেখছেন, এমন প্রশ্নে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটি উপজেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করতে পারে না। তারা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে পারেন। কেন্দ্র তা আমলে নিলে আমাদের শোকজ করবেন। শোকজ জবাবে সন্তুষ্ট না হলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। এটাই নিয়ম।’

জেলা আহ্বায়ক এ চিঠি দিয়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করেছেন দাবি করে মামুন অর রশিদ বলেন, হয়তো বিশেষ কোনো ব্যাক্তিকে খুশি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক। জেলা যুবলীগ একটি আহ্বায়ক কমিটি। এর মেয়াদ তিন মাস। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর ওই কমিটির আর কোনো বৈধতা থাকে না। এ জন্য এ সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারী ও গায়ের জোরে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁদের সিদ্ধান্তে নিক্সন-সাহাদাত অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এ জন্য তাদের পকেট জেলা কমিটি দিয়ে এ কাজটি করিয়েছেন, যা যুবলীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে যায় না।

তবে এমনটা মানতে নারাজ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভাঙ্গা যুবলীগ কেন্দ্রীয় ও দলীয় কোনো কার্যক্রম করে না। হঠাৎ করে তারা বর্ধিত সভা করল, তা জেলা কমিটিকে জানায়নি। তা ছাড়া ওখানে যুবলীগের মধ্যে ভাগ রয়েছে। একপক্ষ করেছে অন্য পক্ষ জানেই না। এ নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। এ ঝামেলা এড়াতেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে সাময়িক ওই তিন উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা ছাড়া, নিক্সন চৌধুরী ও সাহাদাত কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের বহিষ্কার চাওয়ার ক্ষমতা উপজেলা কমিটির নেই। এটা কেন্দ্রের ব্যাপার।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ওই কমিটিগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর ছিল। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আহ্বায়ক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে তাঁর কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলে দাবি করেন। সাহাদাতকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এই অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নিতে পারে।