এখনো জমেনি বেচাবিক্রি

এই পোশাকপল্লিতে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শোরুম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাঁদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।

কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লিতে ক্রেতার আনাগোনা কম। গতকাল সকালে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর কয়েক দিন। এই সময়ে এসেও দেশের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের পাইকারি বাজার কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লিতে বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রভাব পড়েছে এই পোশাকপল্লিতেও। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মালামাল বিক্রি করতে না পারায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় গড়ে ওঠা পোশাকপল্লি প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এই পোশাকপল্লিতে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার প্রদর্শনী কেন্দ্র, ৫ হাজার কারখানা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাঁদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বিপণিবিতানে সাজানো রয়েছে রংবেরঙের জামাকাপড়। দোকানের প্রবেশমুখে কর্মচারীরা ক্রেতার আশায় চেয়ারে বসে আছেন। কেউবা ক্রেতা দেখলে দোকানে আসার জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। দোকানিদের কেউ কাপড় গুছিয়ে রাখছেন, কেউবা পাইকারদের সঙ্গে দর–কষাকষিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বেশির ভাগ দোকানি অলস সময় পার করছেন। ক্রেতাসমাগম না থাকায় কর্মচারীরা মুঠোফোনে ব্যস্ত রয়েছেন।

পূর্ব আগানগর এলাকার নিউ শাহজালাল গার্মেন্টসের পরিচালক শহিদুল মিয়া বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ কষ্টে আছে। তাই জামাকাপড় কেনার প্রতি তাঁদের তেমন আগ্রহ নেই। খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের চাহিদা কম থাকায় পাইকারেরাও আসছেন না। তাই বেশির ভাগ রোজা অতিবাহিত হলেও আশানুরূপ বেচাবিক্রি হয়নি।

চরকালীগঞ্জ এলাকার শাহীন প্যান্ট হাউসের ব্যবস্থাপক মো. শাহীন বলেন, ‘আমার দোকান থেকে বঙ্গবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী প্যান্ট কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এর প্রভাব আমাদের পোশাকপল্লির ওপরও পড়েছে। এতে আমার ১০-১৫ লাখ টাকার বিক্রি কমে গেছে। এখনো দোকানে ও গুদামে অনেক মালামাল রয়েছে। সেগুলো বিক্রি করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’

আলম মার্কেটের এলবি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গেঞ্জি প্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতারা কিনতে রাজি হচ্ছেন না। গত বছর বেচাবিক্রি ভালো ছিল। অন্যান্য বছর এই সময় পণ্যের স্টক (গুদামজাত) শেষ হয়ে যায়, তবে এবার তেমন বিক্রি নেই।

এবার ঈদ উপলক্ষে খুচরা পর্যায়েও কেনাকাটা কম বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থেকে আসা পাইকার রোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ বছর প্যান্টের দাম বেশি হওয়ায় বেছে বেছে সীমিত পরিমাণে নিচ্ছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি প্যান্ট ১০০ থেকে দেড় শ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি না। তাই আমাদেরও বেচাবিক্রির পরিমাণ কমে গেছে।’

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মুসলিম কালেকশনের স্বত্বাধিকারী মুসলিম ঢালী বলেন, ‘বঙ্গবাজারের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী আমাদের পোশাকপল্লি থেকে জিনস প্যান্ট ও গেঞ্জি কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ক্রেতারা না আসায় সেই প্রভাব আমাদের পোশাকপল্লিতেও পড়েছে। এমনিতেই তৈরি পোশাকের কাঁচামালের দাম বেশি। এতে গতবারের তুলনায় এবার পোশাক তৈরিতে বেশি খরচ হয়েছে। এবার ঈদে ব্যবসায়ীরা যে আশা নিয়ে পণ্য উৎপাদন করেছেন, সেই তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে।’