খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ঢল, এক দিনেই সাজেক গেল ২২১ গাড়ি
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বড়দিনের ছুটি। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে শুক্রবার ও শনিবার। এই টানা ছুটিকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। নদী, পাহাড় ও ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে জেলায় ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। পাশাপাশি রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে যেতে যাওয়া পর্যটকেরাও খাগড়াছড়ি হয়ে যাতায়াত করছেন।
আজ বুধবার সকালে শহরের বিভিন্ন জায়গা ও খাগড়াছড়ি গেট এলাকায় সাজেক কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকে মুখর পুরো এলাকা। অনেকেই সাজেক যাওয়ার পিকআপ ও চাঁদের গাড়ি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারাও যাতায়াতে বিপাকে পড়ছেন।
শহরের মধুপুর এলাকার বাসিন্দা শান্তিময় চাকমা বলেন, আগামীকাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে কোথাও পিকআপ না থাকায় তিনি যেতে পারছেন না। এমনকি ভাড়ায় কোনো মাইক্রোবাসও পাচ্ছেন না। সব আগে থেকেই বুকিং হয়ে রয়েছে।
সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান সৈকত চাকমা বলেন, ‘আজ সকালে সাজেকের উদ্দেশে ২২১টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। আগামীকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত সাজেক যাওয়ার জন্য আরও ৪০০টি গাড়ি ইতিমধ্যে বুকিং দেওয়া হয়েছে। নতুন বছর উপলক্ষে সামনের সপ্তাহে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
‘সকালে সাজেকের উদ্দেশে ২২১টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। আগামীকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত সাজেক যাওয়ার জন্য আরও ৪০০টি গাড়ি ইতিমধ্যে বুকিং দেওয়া হয়েছে। নতুন বছর উপলক্ষে সামনের সপ্তাহে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’সৈকত চাকমা, সাজেক কাউন্টারের লাইনম্যান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি হোটেল–মোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে। ছুটিকে সামনে রেখে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গেছে। সাধারণত পর্যটকেরা জেলার আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক, শান্তিপুর অরণ্য কুঠির ইত্যাদি জায়গা দেখার জন্য খাগড়াছড়িতে আসেন।
খাগড়াছড়ি মিলনপুর এলাকার হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন, তাঁদের সব কটি কক্ষ আগামী রোববার পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আহম্মদ রশিদ জানান, আগামী শনিবার পর্যন্ত তাঁদের হোটেলেও কোনো কক্ষ খালি নেই।
পর্যটকের ভিড় ও উচ্ছ্বাস
ছুটিতে খাগড়াছড়িতে এসে উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরাও। আজ সকালে জেলার সাজেক কাউন্টার এলাকায় কথা হয় কানিজ সুলতানার সঙ্গে। তিনি ১৯ জন স্বজনসহ ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ তিনি সাজেক যাবেন, এরপর খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির বিভিন্ন জায়গা ঘুরবেন। ইতিমধ্যে তাঁরা দুটি পিকআপ ভাড়া নিয়েছেন। এগুলো নিয়েই ঘুরবেন।
শহরের আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, তিন দিনের ছুটি এবং নতুন বছরকে উপলক্ষ করে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র সাজানো হয়েছে। পর্যটকেরাও এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। আগামীকাল ও শুক্রবার ভিড় আরও বাড়তে পারে।
পর্যটকদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শহরের বিভিন্ন দোকানিরাও। জেলার স্বপ্নচূড়া রেস্তোরাঁর কর্ণধার নেইম্রা মারমা বলেন, ছুটি উপলক্ষে স্থানীয় ও বাইরের ক্রেতা বাড়ছে। ভিড় সামলাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার ছায়েম মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ও মোড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।’