পপকর্নের ফেরিওয়ালা হোসাইন আবার স্কুলে ফিরতে চায়

খুলনার বিভিন্ন স্কুলের সামনে বাদাম, চানাচুর, পপকর্ন বিক্রি করে সাড়ে আট বছরের হোসাইন সরদার। সম্প্রতি নগরের নিরালা এলাকার একটি স্কুলের সামনেছবি: প্রথম আলো

মাথায় ছেঁড়া ক্যাপ, পরনে ধূসর-কালো হাফপ্যান্টের ওপর হালকা ক্রিম রঙের জামা। দুই হাতে তারের রিংয়ে ঝুলছে পপকর্ন, চানাচুর আর বাদামের ছোট ছোট প্যাকেট। সাড়ে ৮ বয়সী শিশুটি নিজের সমবয়সী ও স্কুলড্রেস পরা শিশুদের উদ্দেশে হাঁক দিচ্ছিল, ‘এই পাপন (পপকর্ন) লাগবে, পাপন?’

শিশুটির নাম হোসাইন সরদার। সম্প্রতি এক দুপুরে তার দেখা মেলে খুলনা নগরের নিরালা এলাকার এক স্কুলের সামনে। পরনে স্কুলড্রেস আর কাঁধে বইভর্তি ব্যাগ থাকার কথা থাকলেও এই বয়সে কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের কঠিন দায়িত্ব। তার কাছে এটাই ‘ব্যবসা’, যা শিখিয়েছে তার ভ্যানচালক বাবা কামরুল সরদার।

স্কুল ছুটির পর সমবয়সী শিশুরা যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফেরে, হোসাইন তখন ব্যস্ত ক্রেতা সামলাতে। কথায় কথায় জানা গেল, হোসাইনের গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলায়। জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর আগে সপরিবার খুলনায় এসেছে। থাকছে নগরের সবুজবাগ এলাকায়।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে হোসাইন সবার ছোট। বড় ভাই রহিম বাদশা (১৬) শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে–ও হোসাইনের মতো আরেকটি স্কুলের সামনে এসব পণ্য বিক্রি করে। আর বোনটি মেজো। একমাত্র সে-ই পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টাকার মতো বিক্রি হয় হোসাইনের। এর প্রায় সবটাই তুলে দেয় বাবার হাতে। হোসাইনের মতে, ‘যদি স্কুল শেষ করি কাজে নামতি পাততাম, তালি ভালো হইত।’

আত্মবিশ্বাসে ভরা হোসাইনের কথা বলার ভঙ্গি মুগ্ধ করার মতো। কঠিন প্রশ্নেরও চটজলদি উত্তর দেয় সে, চোখেমুখে সব সময় লেগে থাকে একরাশ সরল হাসি। একই রকম পর্যবেক্ষণ তার মায়েরও। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘ওর ব্রেন ভালো।’ পাল্টা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হলো, তাহলে পড়ালেখা না করিয়ে কাজে পাঠিয়েছেন কেন? জবাব এল, ‘দুই ভাই–বুনির খরচ দিয়ে পারতিছি নে, তাই কলাম মেয়েডারে একটু শিখাই। এর জন্য ওরে (হোসাইন) আর পড়াশুনো করাইনি।’

কথার এ পর্যায়ে স্কুলটির গেটে বাড়ি ফেরা শিশুদের ভিড় বাড়ে। আবার কাজে মন দেয় হোসাইন। পেছন থেকে ভেসে আসে চেনা শিশুকণ্ঠ, ‘পাপন (পপকর্ন) লাগবে, পাপন?’