চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ, হত্যা ও পুলিশের কাজে বাধাদানের দুটি মামলায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার নগরের কোতোয়ালি ও চান্দগাঁও থানার দুটি মামলায় শুনানি শেষে এই আদেশ দেন আদালত।
পুলিশ জানায়, নগরের কোতোয়ালি থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী ফাহিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলফাজ আহমদ, আন্দোলনকারী হারুনুর রশিদ, ওয়াহিদুল ইসলাম ও ওমাউল ইসলামের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব। একই মামলায় এরফান উদ্দিন, জামশেদ তালুকদার, শহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া আরও আটজনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই নওশেদ কোরেশী আসামিদের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিরা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের কাজে বাধাদানে জড়িত। তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এ ছাড়া মামলার এজাহারে প্রত্যেক আসামিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থক উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শুনানিতে আসামিদের আইনজীবীরা তাঁদের নির্দোষ দাবি করে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন।
১৯ জুলাই নগরের আন্দরকিল্লা থেকে বিশাল মিছিল বের হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে। ওই সময় নগরের নিউমার্কেট, কাজীর দেউড়ি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর এবং পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ৬৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫ হাজার জনকে আসামি করে পৃথক চারটি মামলা করে।
চান্দগাঁওয়ে হত্যা মামলায় ৪ জনের রিমান্ড
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নগরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকায় তিনজন নিহতের মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামির এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন মো. আলমগীর, আবদুল্লাহ আল জোবাইর, তাজ উদ্দিন ও নুর আলম। পুলিশ বলছে, তাঁরা বিএনপির কর্মী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত প্রত্যেকের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
১৭ জুলাই বহদ্দারহাটে সংঘর্ষে তানভীর আহমেদ নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও মো. সাইমন নামের এক মুদিদোকান কর্মচারী গুলিতে নিহত হন। পরে একই ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া মারা যান।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় হওয়া ৩১ মামলায় গত শনিবার রাতে আরও ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় গ্রেপ্তার ১০ এবং নগরে ৪০ জন, যাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। এ নিয়ে নগর ও জেলায় গত ১১ দিনে (১৬ থেকে ২৭ জুলাই) গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ৯৩৪।