বালু তোলায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি 

নির্ধারিত এলাকার বাইরে থেকে বালু তোলা হচ্ছে। শর্ত ভঙ্গ করে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার বাইরে যাচ্ছে বালু।

নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে পদ্মা নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। গত রোববার শরীয়তপুরের জাজিরার পাইনপাড়া এলাকায়
ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুরের জাজিরার পাইনপাড়ায় পদ্মা সেতুর পাশের একটি চর ভাঙনের মুখে পড়েছে। চরের পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে গত ৩ মাসে প্রায় ২০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া মৌজায় পদ্মা নদীর মাঝে ২৫ বছর আগে একটি চর জেগে ওঠে। এরপর সেখানে বসতি গড়ে ওঠে। ওই এলাকার মানুষ প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ শুরু করেন।

পাইনপাড়া চরের পশ্চিম পাশ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নির্মাণকাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে সেতু বিভাগ। নাওডোবা এলাকায় ৪২ নম্বর পিয়ার (খুঁটি) থেকে ২২ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত ছিল পাইনপাড়া চরের ফসলি জমি। ওই জমির ওপর মূল সেতুর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ করার জন্য ২০১৪ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি দুই দিকে ২৫০ মিটার করে ৫০০ মিটার প্রশস্ত একটি চ্যানেল খনন করে। পরবর্তীকালে নদীর স্রোত ও ভাঙনের কারণে ভাটিতে পাইনপাড়ার দিকে চ্যানেলটি আরও দুই কিলোমিটার প্রশস্ত হয়। তখন সেখান দিয়ে নৌযান চলাচল শুরু করে। গত বর্ষার পর ওই স্থানে বালু জমে ভরাট হয়ে গেছে। নভেম্বর থেকে সেখানে ফসলের আবাদ শুরু করেন কৃষকেরা।

স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নদীশাসন করতে নদীর তলদেশ ভরাটের কাজে ব্যবহারের জন্য ও মূল সেতুর অসমাপ্ত কাজে বালু ব্যবহারের জন্য ৫টি প্রতিষ্ঠানের ৫৬টি ড্রেজারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর অধিগ্রহণ করা জমি থেকে ওই বালু উত্তোলন করার কথা রয়েছে। উত্তোলন করা বালু প্রকল্পে ব্যবহার করতে হবে।

কিন্তু ওই ৫৬টি ড্রেজার নির্দিষ্ট এলাকা বাদ দিয়ে সেতুর আশপাশের এক-দেড় কিলোমিটার দূরত্বে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। গতকাল রোববার পদ্মা সেতু এলাকার পাইনপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, চরের কাছ থেকে ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সেই বালু বাল্কহেডে করে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, শরীয়তপুরের নড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু তোলার কারণে ফসলি জমিতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, মূল সেতু ও নদীশাসনের জন্য অধিগ্রহণ করা জায়গা থেকে বালু তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই বালু প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার করতে হবে। অধিগ্রহণ করা এলাকার বাইরে থেকে তোলা হলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

বালু তোলায় যুক্ত একটি ড্রেজারের মালিক নাওডোবা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জমি বিলীন হচ্ছে, এমন অভিযোগের কারণে রোববার বিকেল থেকে বালু তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভাঙনের কবল থেকে ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে স্থানীয় কৃষকেরা গত শনিবার পদ্মার তীরে মানববন্ধন করেন। ওই কৃষকেরা জমি বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করেছেন।

পদ্মা থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু তুললে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বালু তোলার কারণে পদ্মা সেতুর পাশের চরের জমি বিলীনের অভিযোগ পাননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাইনপাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা মৃধা বলেন, ‘আমরা কৃষক। অধিকাংশ জমি পদ্মা সেতুর জন্য নেওয়া হয়েছে। যা-ও বাকি আছে, তা পাইনপাড়ার চরে। আমাদের জমির কাছে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।’

নাওডোবার বাসিন্দা মজিবর ছৈয়াল বলেন, কৃষিজমি বাঁচাতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। কৃষিজমি রক্ষায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।