হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি কমেছে, দাম শতকের বেশি

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি তলানিতে নেমেছে। গত অক্টোবর মাসে স্থলবন্দরটি দিয়ে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো, সেখানে এখন সেই ট্রাকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩–এ। আমদানি কম হওয়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন সেঞ্চুরির ওপরে।

ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানিমূল্য প্রতি মেট্রিক টনে ৩৬০ ডলারের পরিবর্তে ৮০৫ ডলার হওয়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ডলার–সংকট এবং দেশীয় পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় আমদানি কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আমদানি কম হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দামও এখন আকাশছোঁয়া।

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার (২২ নভেম্বর) সারা দিনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩টি ট্রাকে ৮৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত মঙ্গলবারও ৩টি ট্রাকে ৮৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। চলতি সপ্তাহে ১৮ নভেম্বর সর্বোচ্চ ৯টি ট্রাকে ২১৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর পর থেকে আমদানির পরিমাণ কমতে শুরু করে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের কোনো ট্রাক বাংলাদেশে ঢোকেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানিকারকেরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৬ টাকা থেকে ৮৭ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। হিলি বাজারসহ হাকিমপুর, বিরামপুর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার খুচরা বাজারে মধ্যম মানের ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, স্থানীয় বাজারগুলোয় পাতা পেঁয়াজের সরবরাহ আশানুরূপ বেড়েছে। প্রতি কেজি পাতা পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাজারে আসা ক্রেতাদের পাতা পেঁয়াজই বেশি কিনতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

পেঁয়াজের আমদানি কমার জন্য ডলার–সংকটকে দুষলেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডলার–সংকটের দোহাই দিয়ে ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে চাইছে না। ব্যাংকে যাঁদের ক্ষমতা আছে, যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করতে পারেন, তাঁদের নিয়মিত এলসি হচ্ছে। যাঁরা নিরীহ ব্যবসায়ী, তাঁরা মরে যাচ্ছেন। শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকার ডলার উন্মুক্ত করেছে রেখেছে। কিন্তু ব্যাংক এলসি খুলতে দিচ্ছে না। ব্যাংক থেকে এলসি না দেওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী।

ডলার–সংকটের কারণে ঋণপত্র খোলা নিয়ে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনতা ব্যাংক লিমিটেড হাকিমপুর শাখার ব্যবস্থাপক মোরশেদ গোলাম রব্বানী মণ্ডল। খুব শিগগির সমস্যার সমাধান হবে দাবি করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মিত আমদানিকারকদের জন্য ঋণপত্র খুলতে কোনো সমস্যা নেই। তবে যাঁরা অন্য ব্যাংকে লেনদেন করেন, তাঁরা যখন আমাদের ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে আসেন, তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই।’

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সেখান ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি করতে ৯০ টাকার মতো খরচ পড়ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি করতে আমদানিকারকদের বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে, যার কারণে দেশে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।

আরও পড়ুন

বিরামপুর নতুন বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে ভারতের ইন্দুর জাতের পেঁয়াজ ৯৪ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। আগামী শনিবার থেকে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।