গাছের কারণে ঝুঁকিতে সড়ক

অপরিকল্পিতভাবে সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানো ও সড়কসংলগ্ন সেচখালে মাছ চাষের কারণে মাটি ক্ষয়। 

সড়কের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের চাকলা গ্রামের পাশে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চাকলা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের গাছগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হালকা বাতাসেই সড়কের ওপর পড়ছে দুর্বল ও হেলে থাকা গাছগুলো। কখনো কখনো চলন্ত যানবাহনের ওপর গাছ বা ডাল পড়ছে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।

যানবাহনের চালকসহ স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, অপরিকল্পিতভাবে সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানো ও সড়কসংলগ্ন সেচখালে কার্পজাতীয় মাছ চাষের কারণে মাটি ক্ষয় হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সড়কেরও ক্ষতি হচ্ছে। 

সওজের জায়গায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় অপসারণের কাজ চলছে।
মনসুর আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী, (সওজ) বিভাগের পাবনা কার্যালয়

বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চাকলা পর্যন্ত মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের এই অংশটির কিছুটা বেড়া ও বাকিটা সাঁথিয়া উপজেলায় পড়েছে। অংশটির পূর্ব দিকের পাশে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচখাল। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইজারা (লিজ) না নিয়ে অবৈধভাবে কার্পজাতীয় মাছের চাষ করেছেন। এই মাছ জলাশয়ের তলদেশ ও পাড় খুঁড়ে খাদ্য খোঁজে। এতে জলাশয়ের পাড়ে গর্ত সৃষ্টি হয় ও একপর্যায়ে পাড় ভেঙে যায়। বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চাকলা পর্যন্ত মহাসড়কের পূর্ব দিকের অংশে এ কারণে সেচখালের মহাসড়কসংলগ্ন পাড়ে গর্ত সৃষ্টি হয়ে পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। এতে মহাড়কের পাশে লাগানো গাছগুলোর নিচের মাটি সরে যাওয়ায় সেগুলোর ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঝড়ে বা বাতাসে এসব গাছ পড়ে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি মহাসড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে বন অধিদপ্তর থেকে মহাসড়কের দুই পাশে ফলদ, বনজসহ বিভিন্ন জাতের গাছ রোপণ করা হয়। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানভিত্তিক স্থানীয় লোকজনের ৪০ জন করে কমিটি করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা গাছগুলো দেখভাল করেন।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, গাছগুলো লাগানোর সময় পরিকল্পনার কিছুটা ঘাটতি ছিল। সেচখালের পাড় বরাবর ইউক্যালিপটাস–জাতীয় দুর্বল কাণ্ডের গাছ বেশি লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া পাড়ের কাছাকাছি স্থানে লাগানো হয়েছে অনেক গাছ। ফলে সেচখালের পাড়ের গাছগুলোর নিচের মাটি সরে গিয়ে সড়কে পড়ছে। এ ছাড়া সামান্য ঝড়েও দুর্বল কাণ্ডের গাছের ডাল মহাসড়কে ভেঙে পড়ছে। এভাবে সড়কে গাছ অথবা ডাল ভেঙে পড়ায় দুর্ঘটনাই শুধু ঘটছে না, মহাসড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।

গত বছর সোনদহ এলাকায় মহাসড়কের ওপর গাছ পড়ে থাকায় ট্রাক ও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ছাড়া ছোট-বড় আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

সড়কের এই অংশ দিয়ে প্রায়ই চলাচল করেন ট্রাকচালক রায়হান আলী। তিনি বলেন, গত ২৩ মে বিকেলে পাবনা থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে কোরিয়াল এলাকায় পৌঁছানোর পর জোরে বাতাস শুরু হয়। হঠাৎ ট্রাকের সামনের দিকে ইউক্যালিপটাসগাছের ডাল পড়ে সামনের গ্লাস ভেঙে যায়। বড় দুর্ঘটনা থেকে তিনি বেঁচে যান। 

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মিজানুর রহমান ও ফরিদ আলী বলেন, বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চাকলা হয়ে কাশিনাথপুর যাওয়ার পথে ঝোড়ো বাতাস দেখলেই তাঁরা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েন। কারণ, এই জায়গায় জোরে বাতাস হলেই মরা গাছ ও গাছের ডালপালা মহাসড়কে এসে পড়ে। এভাবে এর আগে বেশ কয়েকবার সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর ডালপালা পড়ে কাচ ভেঙেছে, যাত্রীদেরও ক্ষতি হয়েছে। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুর আহমেদ বলেন, সওজের জায়গায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় অপসারণের কাজ চলছে। আর মাছ চাষে সড়কের ক্ষতির বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘ওই স্থানে মাছ চাষের জন্য কাউকে ইজারা (লিজ) দেওয়া হয়নি। কেউ সেখানে মাছ চাষ করলে তা অবৈধভাবে করছে। শিগগিরই সেচখালের ওই স্থানে অভিযান চালানো হবে।