ধর্ষণের মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ আরও দুজন

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক
প্রথম আলো ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কথিত স্ত্রীর করা ধর্ষণের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ আরও দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আজ রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।

সাক্ষ্য প্রদানকারীরা হলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার তৎকালীন পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম ও ডিএনএ অ্যানালিস্ট রবিউল ইসলাম। এ নিয়ে এই মামলায় ৪০ সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দিলেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ আদালত এখনো ধার্য করেননি।

এর আগে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামুনুল হককে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাঁকে পুলিশি পাহারায় পুনরায় কাশিমপুর কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষক রবিউল ইসলামকে জেরার সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আলামত কোথা থেকে, কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি তা বলতে পারেননি। ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় তাঁর সঙ্গে সহকারী চিকিৎসক যাঁরা ছিলেন, প্রতিবেদনে তাঁদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল কি না, তা জানতে চাইলে তিনি না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, ওই ডিএনএ প্রতিবেদন মিথ্যা ও বানানো। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক শফিকুল ইসলামও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বলে তিনি জানান।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষক রবিউল ইসলাম তাঁর সাক্ষ্যে আদালতে বলেছেন, তোয়ালেতে পাওয়া শুক্রাণুর সঙ্গে মামুনুল হকের রক্তের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর সাক্ষ্যে বলেছেন, রয়েল রিসোর্টের ঘটনার পর রিসোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জানিয়েছেন, মামুনুল হক তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এখানে এনে ধর্ষণ করেছেন। আগামী ধার্য তারিখে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও সাক্ষ্য দেবেন।

২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে একটি রুমে কথিত স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাঁদের ছিনিয়ে নেয়। ওই ঘটনার ১৫ দিন পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডের ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী বাদী হয়ে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপর ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের আদালত ধর্ষণের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।