তদন্তে গিয়ে টাকার জন্য গালাগাল, গাছা থানার ওসি ও এএসআই প্রত্যাহার

গাজীপুর জেলার মানচিত্র

একটি অভিযোগের তদন্তে গিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বাজে আচরণ ও থানায় নিয়ে গায়ে হাত তোলার ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের এক আদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার দুজনকে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়।

প্রত্যাহার হওয়া দুজন হলেন গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল আমিন। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেহরক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোহাম্মদ ইসলামের পরিবার গাছা থানার বাদশা মিয়া স্কুল রোডে বসবাস করে। পাঁচ মাস আগে নগরীর মোগরখাল এলাকার আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকায় ৮ শতাংশ জমি কেনেন মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে আবদুল জলিল। ২৫ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাকি রেখে জমির রেজিস্ট্রি করা হয়। কথা ছিল দুই থেকে তিন মাস পর বাকি টাকা পরিশোধ করবেন। আবদুল জলিল অন্য আরেকটি জমি বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জমিটি বিক্রি করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে জমি বিক্রেতার সঙ্গে মনোমালিন্য হলে একটি উকিল নোটিশ পাঠান আবদুল মান্নান। এরপর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবদুল মান্নান গাছা থানায় মো. আবদুল জলিলকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দেন।

আবদুল জলিল বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করতে ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এএসআই আল আমিন সাদা পোশাকে তাঁর বাড়িতে আসেন। প্রবেশ করেই আল আমিন হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। ওই সময়ে তিনি বাথরুমে থাকায় তাঁর ছেলে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলে খারাপ আচরণ করেন। পরে তিনি বেরিয়ে এলে তাঁর সঙ্গেও বাজে আচরণ ও গালিগালাজ করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে আলাপ–আলোচনার একপর্যায়ে এএসআই আল আমিন তাঁর কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে তিনি জমি বিক্রেতার কাছ থেকে কয়েক মাসের সময় নিয়ে দেবেন বলে জানান। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাঁর সঙ্গে আরও খারাপ ব্যবহার করা হয়।

আবদুল জলিল আরও বলেন, একপর্যায়ে তাঁকে গাছা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার নিচতলায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে বসিয়ে রেখে তাঁর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়। একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন এএসআই আল আমিন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ওসি শাহ আলমকে জানালে তিনি কোনো প্রতিকার না করে তাঁকে পাওনাদারের টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলেন। পরদিন ব্যবসায়ী আবদুল জলিল গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহাবুব আলমকে মৌখিকভাবে এবং পরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ বলেন, ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় ওসি মো. শাহ আলম ও এএসআই আল আমিনকে প্রত্যাহার করা হয়।

আবদুল জলিল বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি এর সঠিক বিচার করেছেন। আমি এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাই না।’