বরিশাল বিভাগে চিকিৎসকের পদ কম, তবু ৪৬ শতাংশ শূন্য

বরিশাল বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব পড়েছে মাত্র ৬৮৮ জন চিকিৎসকের কাঁধে।

জনসংখ্যার বিবেচনায় বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এমনিতেই চিকিৎসকের অনুমোদিত পদের সংখ্যা কম। এর মধ্যে যতগুলো পদ আছে, তার ৪৬ শতাংশই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর ফলে বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব পড়েছে মাত্র ৬৮৮ জন চিকিৎসকের কাঁধে। কম জনবল দিয়ে কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

২০২২ সালের ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, বিভাগের জনসংখ্যা ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৯। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি সদর হাসপাতালের পাশাপাশি ৪২টি উপজেলার মধ্যে ৪০টিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকের পদ আছে ১ হাজার ২৮১টি। বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৬৮৮ জন, শূন্য পদ ৫৯৩ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একজন চিকিৎসক থাকতে হবে। তবে বরিশাল বিভাগে প্রতি ৭ হাজার ১০৩ জন মানুষের জন্য একটি করে চিকিৎসকের পদ আছে। পদ শূন্য থাকায় এখন ১৩ হাজার ২২৬ জনের জন্য আছেন একজন চিকিৎসক।

জেলায় হিমশিম চিকিৎসকেরা

১৫ বছর আগে বরগুনা সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে আড়াই শ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু জনবল কাঠামো ১০০ শয্যার রয়ে গেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পরিপাটি ছয়তলা নতুন ভবনে সুপরিসর অস্ত্রোপচার কক্ষ, রোগনির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি, শিশুদের জন্য আলাদা ইউনিট। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে না।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫০-২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী আসেন। এর বাইরে প্রশাসনিক কাজ, ময়নাতদন্ত, ধর্ষণের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজকর্ম মাত্র ১৩ জন চিকিৎসককে সামাল দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ৫৫টি।

বুকে ব্যথা হওয়ায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা বরগুনা সদরের হাজারবিঘা এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে আইছি। এহন বেলা বাজে ১১টা। দ্যাহেন কত্তো রোগী অপেক্ষায় আছে। মনে অয় আইজ ডাক্তার দেখাইতে পারমু না।’

আরও পড়ুন

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম নজমুল আহসান বলেন, এত অল্পসংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের সামাল দেওয়া খুবই দুরূহ।

 বরিশাল সদরে ১০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এই হাসপাতালে ৩৩টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ২২ জন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থাও এমন। আড়াই শ শয্যার এই হাসপাতালের জনবল কাঠামো ১০০ শয্যার। এখানেও ৫৮টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ২০ জন।

ভোলার আড়াই শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ ৫৯টি। কিন্তু আছেন মাত্র ২৪ জন। সম্প্রতি আড়াই শ শয্যার জনবল কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার। পিরোজপুর জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল ৫০ শয্যার। ৩৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত ১৯ জন। ঝালকাঠির ১০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৪০ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ১৩ জন কর্মরত।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ধুঁকছে

ভোলার চর আইচায় ২০ শয্যার হাসপাতালসহ ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ আছে ১৮৮টি। তবে কর্মরত আছেন মাত্র ১০৫ জন চিকিৎসক। পিরোজপুরের ছয়টি উপজেলায় চিকিৎসকের ১৫৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৯৬ জন। পটুয়াখালীর ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কুয়াকাটা ও কাঁঠালতলীর ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ ২০১টি। কর্মরত আছেন মাত্র ৯৮ জন।

তবে বরিশাল জেলার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। ৯টি উপজেলা ও চাখারের ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে ২৫৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৬৭ জন। বরগুনার ৫টি উপজেলায় ১৩১টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭২ জন।