কুমিল্লায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক
বিএনপির বর্তমান-সাবেক নেতাদের দেখা মিলছে না
২০ দিন ধরে ওই এলাকাগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দেখা মেলেনি। বাসাবাড়িতেও নেই তাঁরা।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় দলীয় কার্যালয়ের পাশে, শিক্ষা বোর্ড এলাকা, ধর্মসাগরের দক্ষিণ পাড়ে বাদুরতলা ও কুমিল্লা জিলা স্কুল সড়কের পাশে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে আড্ডা দিতেন। এমন চিরচেনা দৃশ্য এখন আর নেই।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ দিন ধরে ওই এলাকাগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দেখা মেলেনি। বাসাবাড়িতেও নেই তাঁরা। পথেঘাটে, হাটবাজারেও তাঁদের দেখা নেই। আজ এখানে তো, কাল আরেক জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। মূলত হরতাল-অবরোধে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। যাঁরা নাশকতায় ইন্ধন দিচ্ছেন, তাঁদের নজরদারি করছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করছে।আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার
কুমিল্লার বিএনপির নেতাদের ভাষ্য, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন কর্মসূচি করছেন না। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে তাঁরা ঘরছাড়া। তাঁদের বিশ্বাস, দেশে একতরফা নির্বাচন হবে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের বাদুরতলা এলাকায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এলাকায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উত্বাতুল বারী, কান্দিরপাড় দলীয় কার্যালয় এলাকায় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা, কুমিল্লা জিলা স্কুল সড়কের পাশে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কান্দিরপাড় এসআর প্ল্যানেট বিপণিবিতানের সামনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান প্রায় নিয়মিত আড্ডা দেন। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন গত ২৯ অক্টোবর হরতালে বাধা দেয় পুলিশ। এর পর থেকে দলের নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দেন। পুলিশও নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে নজরদারি করে। পাঁচ দফা অবরোধে দলের পদধারী কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় নেতারা কেউ ঢাকায়, কেউ শহরতলির বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপেও অনেককে পাওয়া যায় না।
গত শনিবার দুপুরে কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলার দায়িত্বশীল সক্রিয় অন্তত চারজন নেতাকে ফোন করা হয়। তাঁদের দুজনের নম্বরে ফোন ঢোকেনি। দুজন ফোন ধরেননি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছে। কিন্তু একতরফা এক দলকে নিয়ে ভোট করছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপিকে মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করা হয়েছে। পুলিশ গত ২০ দিনে জেলার ১৭ উপজেলা থেকে অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাড়ি বাড়ি অভিযান করছে। বিএনপি মনে করে, ‘এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি।
একতরফা তফসিলের বিরুদ্ধে আমরা মাঠে থাকব। গ্রেপ্তার, হামলা, মামলার আতঙ্কে কর্মীরা বাসাবাড়িতে থাকছেন না। বের হচ্ছেন না। নির্বাচনে মাঠে আওয়ামী লীগ একলা। আর আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না, কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছি না। এটা তো গণতন্ত্র নয়। নির্বাচনী পরিবেশও নয়।’
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। যাঁরা নাশকতায় ইন্ধন দিচ্ছেন, তাঁদের নজরদারি করছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করছে।