জন্মসনদে বয়স বাড়িয়ে বাল্যবিবাহের আয়োজন, প্রশাসনের তৎপরতায় বন্ধ

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন সনদে বয়স বেশি দেখিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহের আয়োজন করেছিল পরিবার। স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের খবর পান মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান। তাঁর তৎপরতায় বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে ওই ছাত্রী।

ভুক্তভোগী ছাত্রী মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে দেওয়া তথ্যমতে, ওই ছাত্রীর জন্মতারিখ ১০ জুন ২০০৮। জন্মনিবন্ধনে সাল পরিবর্তন করে ১০ জুন ২০০৪ দেখিয়ে তাকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হচ্ছিল।

উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই ইউনিয়নের দুলাশিয়া গ্রামের খুরশিদ মিয়ার মালদ্বীপপ্রবাসী ছেলে মোশারফ মিয়ার (২৫) সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ছাত্রীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের কথা ছিল। গতকাল বুধবার ছিল গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। বর ও কনের বাড়িতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য কেনা হয়েছিল গরু। স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে গতকাল রাতে বাল্যবিবাহ আয়োজনের খবর পান ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অলিদুজ্জামান। খবর পেয়ে তিনি মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন ও বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল আহমদকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

এলাকাবাসী জানান, বাল্যবিবাহের আয়োজন না করতে রাতেই বর ও কনের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যান। আজ দুপুরে কয়েক পুলিশ ও ইউপি সদস্য আবার কনের বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিবাহ আয়োজনের সত্যতা পান। কনের বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। পরে কনের মা ও দাদাকে বাল্যবিবাহের কুফল ও রাষ্ট্রীয় আইনকানুনের বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তাঁরা বিয়ে বন্ধ করতে সম্মত হন। এমনকি ১৮ বছরের আগে ওই ছাত্রীকে বিয়ে দেবেন না বলেও লিখিতভাবে তাঁরা অঙ্গীকার করেন।

মেয়েটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরার ভুল অইয়া গেছে। ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়া দেহন যায় না, এইডা আমরার জানা আছিইন না।’

বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপির চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, তিনি বাল্যবিবাহের ঘোর বিরোধী। স্থানীয় একটি চক্র ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করছিল। তাঁদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তাঁর ইউনিয়নে কোনো অবস্থায় তিনি বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না।

মধ্যনগরের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অলিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ওই ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন সব সময় তৎপর আছে।