দুই বাংলার ছোটকাগজের বড় সম্মিলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হতে যাওয়া দুই বাংলার ছোটকাগজের সম্মিলন চিহ্নমেলার ফটক
ছবি : প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই বাংলার ছোট কাগজের লেখক-পাঠক-সম্পাদকদের নিয়ে সম্মিলন। ‘চিহ্নমেলা মুক্তবাঙলা ২০২২ ’ নামে দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন করছে সাহিত্যের ছোট কাগজ চিহ্ন। ১৭ অক্টোবর এই মেলার উদ্বোধন করবেন লিটলম্যাগ ব্যক্তিত্ব সন্দীপ দত্ত। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

এর আগে ২০১১, ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে চিহ্নমেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবার মার্চে এই মেলা হলেও এবার করোনার কারণে বিলম্বে অক্টোবরে হচ্ছে এই মেলা। এবারের আয়োজনে চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক হামিদ কায়সার, চিহ্ন সারস্বত-সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন প্রবীণ সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জুলফিকার মতিন, চিহ্ন লিটলম্যাগ সম্মাননা পাচ্ছে চট্টগ্রামের ছোটকাগজ তৃতীয় চোখ ও ভারতের ছোটকাগজ নৌকো।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ একাডেমিক ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চিহ্নমেলা উদ্‌যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক ও চিহ্ন সম্পাদক শহীদ ইকবাল। তিনি জানান, দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক লিটলম্যাগসহ পাঁচ শতাধিক লেখক, পাঠক ও সম্পাদকের সমাবেশ ঘটবে। সম্মিলনের আগের দিন ১৬ অক্টোবর পড়ন্ত বিকেলে ফানুস উড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা করবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার।

১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে দুই বাংলার ছোটকাগজের সম্মিলন চিহ্নমেলা। এ উপলক্ষে শেষ করা হচ্ছে সাজসজ্জার কাজ
ছবি : প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও শোভাযাত্রা ১৭ অক্টোবর সকাল ১০টায়। উদ্বোধন করবেন লিটলম্যাগ ব্যক্তিত্ব সন্দীপ দত্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির থাকবেন দেশবরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ। শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টার দিকে মামুন মুস্তাফার সঞ্চালনায় বসবে ‘প্রয়াত প্রিয়জন’ শিরোনামে স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ, সৈয়দ শামসুল হক, দেবেশ রায়, আনিসুজ্জামান ও হাসান আজিজুল হককে নিয়ে কথা বলবেন নির্মলেন্দু গুণ, সনৎ কুমার সাহা, জুলফিকার মতিন, রুহুল আমিন প্রামাণিক, ইমানুল হক ও মোহাম্মদ আজম।

এই আয়োজন বাংলা ভাষাভাষীর। ভারতের বিহার, আসাম, দার্জিলিং, আগরতলা, ত্রিপুরা, কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লিটলম্যাগগুলো আসছে। এখানে অনেক পত্রিকা আসছে, যেগুলোর শতাধিক সংখ্যা বের হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ১০৫টি লিটল ম্যাগাজিন আসছে।
শহীদ ইকবাল, আহ্বায়ক, চিহ্নমেলা উদ্‌যাপন পর্ষদ

দুপুর ১২টায় ‘সৃষ্টিশীলতার সমাজতত্ত্ব ও লিটলম্যাগ’ শিরোনামে মুক্তভাষণ দেবেন এই সময়ের চিন্তক মোহাম্মদ আজম। দুপুরে সৈকত হাবিবের সঞ্চালনায় জমবে ‘গল্প ও কবিতা পাঠ’। এতে কবি নির্মলেন্দু গুণ থাকবেন মধ্যমণি। বিকেলে আড্ডা বসবে ‘ভাষার অনুবাদ, অনুবাদের ভাষা’ নিয়ে। মোজাফ্ফর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুবাদ নিয়ে মতামত রাখবেন আলম খোরশেদ, শরীফ আতিক-উজ-জামান, সফিকুল ইসলাম ও প্রত্যয় হামিদ। এদিন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আরম্ভে থাকছে অধ্যাপক ইকবাল মতিনের বেহালা। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে হাসান ঈমামের উপস্থাপনায় কাঙালিনী সুফিয়ার গান ও তাঁর জীবনকথা দিয়ে।

১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বাংলার ছোটকাগজের সম্মিলন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন চিহ্নের সম্পাদক অধ্যাপক শহীদ ইকবাল। আজ শনিবার দুপুরে
ছবি : প্রথম আলো

অধ্যাপক শহীদ ইকবাল জানান, মেলার শেষ দিন বেলা ১১টায় ‘লিটলম্যাগে লেখালেখি: দ্বৈরথ ও দ্বন্দ্ব’ নিয়ে আড্ডায় বসবেন সন্দীপ দত্ত, হোসেনউদ্দীন হোসেন, নারায়ণ রায়, রাজা সহিদুল আসলাম, মনিরুল মনির ও মনজু রহমান। পরপরই সন্দীপ দত্ত ও শহীদ ইকবালকে মধ্যমণি রেখে মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বিকেলে রাহেল রাজীবের সঞ্চালনায় ‘গদ্য আখ্যান ও বাংলার গ্রামীণ জীবন’ নামে প্রবন্ধ পাঠ করবেন মোস্তাক আহমেদ। এতে আলোচনা করবেন কানাই সেন, তারেক রেজা, এম আবদুল আলীম, মাসুদুল হক ও কাজী রাফি। বিকেলে অংশগ্রহণকারী পত্রিকার সম্পাদকদের চিহ্নস্মারক দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন শহীদ ইকবাল।

সমাপনী সন্ধ্যায় ‘চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার’, ‘চিহ্ন সারস্বত-সম্মাননা’ ও ‘চিহ্ন লিটলম্যাগ-সম্মাননা’ প্রদান করা হবে। শেষ দিনের সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজনে থাকছে হাসান রাজার বাঁশি, বাউল গানের দল ‘মাতাল’ পরিবেশনা ও শ্রদ্ধা নাগের ধ্রুপদি নৃত্য।

শহীদ ইকবাল বলেন, চিহ্ন যাঁদের পুরস্কার দিচ্ছে, তাঁরা বাংলাদেশে খুব বেশি পরিচিত নন। তাঁরা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাননি। কিন্তু তাঁদের লেখালেখির বয়স ও সাহিত্যকর্ম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাঁরা লেখালেখির জায়গায় নিরলস। এই আয়োজন বাংলা ভাষাভাষীর। ভারতের বিহার, আসাম, দার্জিলিং, আগরতলা, ত্রিপুরা, কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লিটলম্যাগগুলো আসছে। এখানে অনেক পত্রিকা আসছে, যেগুলোর শতাধিক সংখ্যা বের হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ১০৫টি লিটল ম্যাগাজিন আসছে। বৃহৎ বঙ্গের যে ভৌগোলিক সীমানা, কাঁটাতারের বেড়া বা প্রাচীর, ভিসা-পাসপোর্টের যে ঝক্কি-ঝামেলা, সেটিকে তাঁরা অতিক্রম করতে চান বাংলা ভাষার স্বার্থে। এই আয়োজনে সবাইকে সাদর আমন্ত্রণ জানান তিনি।

সাহিত্য পত্রিকা চিহ্ন ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবালের সম্পাদনায় চিহ্ন দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত বের হচ্ছে। গত ২২ বছরে চিহ্ন পত্রিকার ৪৩টি সংখ্যা বের করেছে। লেখালেখি ছাড়াও এখানে ধারাবাহিক পাঠচক্র, রোববারের আড্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হয়। স্নান ও লোরকা নামে আরও দুটি পরিপূরক ছোটকাগজ রয়েছে এর।