‘ভোট ডাকাতির কথা চিন্তা করলে পদ্মা সেতু দিয়া না, সাঁতরাইয়া পদ্মা নদী পার হতে হবে’

জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নিক্সন চৌধুরী। আজ শুক্রবার বিকেলে ভাঙ্গা উপজেলার বাইশ রশি শিব সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহর উদ্দেশে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি হ্যাটট্রিক করব। এই এলাকায় আগামীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমার এলাকায় ভোট ডাকাতির কথা ভাববেন না। ভোট ডাকাতি করার চিন্তা করলে পদ্মা সেতু দিয়া না, সাঁতরাইয়া পদ্মা নদী পার হতে হবে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের বাইশ রশি শিব সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মজিবুর রহমান চৌধুরী এসব কথা বলেন। নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী মীর ও একই ইউপির সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য রাজীয়া সুলতানার যোগদান উপলক্ষে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। অপরদিকে ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মজিবুর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ওই তিন উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই নেতার নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্যাহ পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরীর কাছে।

সাবেক সংসদ সদস্য জাফরউল্যাহর সমালোচনা করে মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আপনি (জাফরউল্যাহ) কোন মুখে ভোট চান। মানুষের বিপদের সময় তাঁদের পাশে থাকেন না। এখন নির্বাচনের আগে এলাকায় এসেছেন। আপনি শুধু আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং পানামার টাকাকে ভালোবাসেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মোটেও বেফাঁস কথা বলবেন না। দেশের মানুষ চায়, আমি নৌকা প্রতীক পাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নমিনেশন (মনোনয়ন) চাইব। যদি নমিনেশন পাই, তাহলে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে শেখ হাসিনাকে উপহার দেব। আর যদি কোনো ষড়যন্ত্রের কারণে নৌকা না পাই, তাহলে আমি আমার নয়টি বছর জীবন–যৌবন দিয়ে আপনাদের জন্য কাজ করেছি, আপনাদের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

এসব কথা বলে মজিবুর রহমান চৌধুরী জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কী বলেন, তাহলে নির্বাচনে দাঁড়াব কি না?’ তখন উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলেন, ‘দাঁড়ান’, ‘দাঁড়ান’।

এদিকে মজিবুর রহমান চৌধুরী তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মধ্যে দলাদলি করবেন না, মারামারি করবেন না। এই এলাকার লোক শান্তি চায়। আপনারা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। তবে যদি কেউ মারামারি করতে চান, তাহলে তাঁকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

নূরুল্লাগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন আলমের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম। সভায় আরও বক্তব্য দেন মজিবুর রহমানের পক্ষে যোগ দেওয়া আশরাফ আলী মীর ও রাজীয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেযারম্যান কাজী শফিকুর রহমান প্রমুখ।