আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের সমাবেশে বন্দুক হাতে বিএনপি নেতা

ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান ওমর এক সমাবেশ করেছেন। পাশে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে এক বিএনপি নেতা। সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (কাঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করেছেন। ওই সমাবেশে অস্ত্র হাতে এক বিএনপি নেতাকেও দেখা গেছে। তিনি শাহজাহান ওমরের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ হয়। সভায় উপস্থিত লোকজন বলেন, বন্দুকধারী ওই ব্যক্তির নাম আবদুল জলিল মিয়াজী। তিনি কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। সম্প্রতি তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আজ সমাবেশ শুরুর আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে উপস্থিত হন শাহজাহান ওমর। সমাবেশে শাহজাহান ওমর কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

এ সময় সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বসার বাদশা, শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহমুদ হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘কাঠালিয়া আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। এখানে তরুণ লীগ, কিবরিয়া লীগ, বুড়া লীগ ও বাচ্চা লীগ থাকতে পারবে না। এখানে থাকবে শুধু শেখ হাসিনা গ্রুপ। ...আমি এবং বিএনপির দলবলসহ আপনাদের মেহমান। আমাদের বরণ করে নেবেন। আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব।’

আরও পড়ুন

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কবির বলেন, ‘আমি যে দলই করি না কেন, শাহজাহান ওমরকে পছন্দ করি। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্বাচন করব। তাঁর নির্বাচনী মাঠে থাকব বলেই সমাবেশে গিয়েছি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া সিকদার বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁকে নিয়ে মাঠে থাকব আমরা। শাহজাহান ওমর সাহেব আমাদের ডেকেছেন, আমরা তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী সভা করেছি। বিএনপির কেউ তাঁর সঙ্গে নির্বাচন করলে অসুবিধা কোথায়?’

এদিকে সভায় বন্দুক হাতে বিএনপি নেতাকে দেখা যাওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। সভায় উপস্থিত একাধিক লোক বলেন, সভা ছিল আওয়ামী লীগের। আর সেখানে অস্ত্র হাতে দেখা গেল বিএনপি নেতাকে। আবার তিনি ছিলেন শাহজাহান ওমরের একদম পাশে। প্রকাশ্যে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করায় অনেকে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

আরও পড়ুন

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, বন্দুকটি আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান ওমরের লাইসেন্স করা। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় পাশে বসে থাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আ. জলিল মিয়াজীর কাছে সেটি রাখেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজীর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া সিকদার বলেন, বন্দুকটি শাহজাহান ওমরের লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র। এটি নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে রাখা হয়েছিল। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি।

আরও পড়ুন

কৈফিয়ত তলব

এদিকে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও ঝালকাঠি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক পল্লবেশ কুমার কুণ্ডু এ ঘটনায় শাহজাহান ওমরের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।