কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতির আশঙ্কায়’ স্থগিত

কবরস্থান কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টারিং করেছিলেন দুই সভাপতি প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নেছবি: প্রথম আলো

কবরস্থানের কমিটি গঠন হবে—এ খবরে সভাপতি পদ পেতে তৎপর হয়েছিলেন যুবদল ও শ্রমিক দলের দুই নেতা। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচনের। গঠিত হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন নির্ধারণ করে মনোনয়নপত্রও বিক্রি করা হয়। দুই প্রার্থী রীতিমতো পোস্টার ছাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন আর হলো না। ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন গঠিত নির্বাচন কমিশন। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে। ইউনিয়নটির বালুদিয়া, মহরখালী ও জগতলা গ্রামের ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থানের সভাপতি পদ নিয়ে ২৪ মে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই আজ বুধবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাচনটি স্থগিত করা হয়েছে।

কবরস্থানটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিশনের প্রধান আবদুল মতিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটির সভাপতি নির্ধারণ করা হবে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনে সভাপতি পদে দুজন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন চাটমোহর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুস (ছাতা প্রতীক) এবং মূলগ্রাম ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম (চেয়ার প্রতীক)। প্রতিজন ৩০ হাজার টাকা করে দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কবরস্থানটির কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এর পর থেকেই কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। সভাপতি পদ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন দুই নেতা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি থানায় জানান। পরে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় তফশিল।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান আবদুল মতিন এর আগে জানিয়েছিলেন, বালুদিয়া, মহরমখালী ও জগতল—তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবারের একজন করে পুরুষ ভোটার ভোট দেবেন। মোট ৮০০ জন ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ২৪ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থানসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দুই প্রার্থী ৩০ হাজার টাকা করে দিয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এই টাকা নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, সভাপতি পদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানালে ভোটের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ নিয়েই ভোটের আয়োজন চলছিল। তবে ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নজরে রেখেছে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।