মাটি বহনে রাস্তা, জমির সর্বনাশ

গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর পাড় ও জমি থেকে মাটি তোলায় ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফসলি জমির পাশ থেকে মাটি কেটে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে সরবরাহ করা হয়। এসব ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তা দেবে গেছে। সম্প্রতি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রামে
প্রথম আলো

ফসলি জমি, পদ্মার চর ও রাস্তার পাশে অবৈধভাবে গর্ত ও পুকুর খনন করে মাটি কেটে তা ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এই অপতৎপরতা চলছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়। ভারী যানবাহনে করে মাটি পরিবহন করায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি ও রসুলপুর এলাকায় ফসলের মাঠ ও রাস্তার পাশ থেকে পুকুর খননের নামে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। দেবগ্রাম ইউপির সাবেক সদস্য আবদুল মজিদ শেখ ও তাঁর ছেলে লোকমান শেখ মাটি পরিবহনের জন্য রাস্তার পাশ কেটে বিশাল পুকুর খনন করছেন। প্রতিদিন ট্রাক চলাচল করায় রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ হয়ে গেছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে এলাকাবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান খান বলেন, প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত মাটিভর্তি ট্রাক আসা–যাওয়া করায় রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রাস্তার পাশ ধসে পড়ছে।

মজিদ শেখের ছেলে লোকমান শেখ বলেন, পুকুর খননের কাজ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

উত্তর চরপাচুরিয়া এলাকার কয়েক শ গজ দূরের রসুলপুর এলাকায় ফসলি জমির মাটি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এক্সকাভেটরের চালক মিরাজ শেখ বলেন, কয়েক দিন আগে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করে এনেছেন। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক মাটি কাটা হচ্ছে। পুকুর কাটতেই এখানকার মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ট্রাকচালক আলমগীর সরদার বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন একেকটি ট্রাক সাত-আটটি করে ট্রিপ মারতে পারে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৬০ ট্রাক মাটি ভাটায় যাচ্ছে। স্থানীয় বাচ্চু মৃধা তাঁদের জমিতে পুকুর খনন করতে গাড়িপ্রতি ৫০০ টাকা করে মাটি বিক্রি করছেন বলে তিনি জানান।

দৌলতদিয়ার ক্যানালঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বারপাড়া ও কলার বাগান এলাকা থেকে দীর্ঘদিন মাটি তোলা হচ্ছে। কলার বাগান ও বাহিরচর এলাকার মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলে দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুল সড়ক দেবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অবাধে মাটি তোলার কারণে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং চরকরনেশনা ও ছাত্তার মেম্বার পাড়া গ্রাম ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

মাটি কাটায় জড়িত জিলাল প্রামানিক বলেন, দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট এলাকায় তিনিসহ স্থানীয় সহিদ মোল্লা, কাদের ফকীরসহ কয়েকজন এ কাজ করেন। এ ছাড়া ফেরিঘাট এলাকায় বেলায়েত মণ্ডল, মুসা মণ্ডল, খোকনসহ কয়েকজন এবং কলার বাগান এলাকার পদ্মার পাড় থেকে রিপন, আমজাদসহ কয়েকজন মাটি কাটছেন। এ জন্য জমির মালিকদের ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দেন তাঁরা।

গোয়ালন্দের ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, অবৈধভাবে বালু বা মাটি উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনে অভিযান চালিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।