দলীয় ও স্বতন্ত্র, দুভাবেই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বিএনপির গিয়াস কাদের

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান (স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। এই আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাশাপাশি উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারকেও মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিনিধিদল। রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) পরান্টু চাকমার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকের কাদের চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-৬ আসনে বিএনপি সর্বশেষ জয়লাভ করেছিল ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে হারিয়ে জিতেছিলেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে ২০০১ ও ২০০৮–এর নির্বাচনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর কাছে হেরেছিলেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তাঁরা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে ওই সময় তিনি দলীয় মনোনয়নপত্রের চিঠি জমা দিতে পারেননি।

পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণখেলাপি। তাই তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আর রাউজান আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী। কিন্তু  ঋণখেলাপির জন্য প্রার্থিতার বৈধতা পাননি। তখন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন জসিম উদ্দিন সিকদার।

সোমবার রাউজানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে উপজেলা সদরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা অটুট থাকবে বলে নেতা-কর্মীদের জানান তিনি। বলেন, ‘রাউজানের মানুষের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক না হলেও আত্মার সম্পর্কে। অতএব আমিই রাউজানে বিএনপি থেকে নির্বাচন করব। আপনারা সবাই এই বিশ্বাস রাখেন।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে বলতে চায়নি মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া প্রতিনিধিদল। তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দ্রুত জেলা প্রশাসক কার্যালয় ত্যাগ করে।

তবে স্বতন্ত্র হিসেবে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ। রাউজানে কে বিএনপির প্রার্থী—তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে দলের মহাসচিবের তালিকা পাওয়ার পর। দলের মহাসচিব নির্বাচন কমিশনকে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা দেবেন। ওই তালিকায় যাঁর নাম থাকবে, তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। দুই নেতার বিরোধকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে ছয়টি।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি থেকে দুজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারকে গত রোববার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা চিঠি দেওয়া হয়। একই আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় ৪ ডিসেম্বর।

আমার হাতে রক্তের দাগ নেই: খন্দকার

আজ দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম আকবর খন্দকার বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে রাউজানে আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না। কোনো সন্ত্রাস হবে না।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার সময় তাঁর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক ছিলেন। তাঁরা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির প্রার্থী গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, রাউজানকে চাঁদাবাজ, দখলদার ও মাদকমুক্ত করা দৃঢ় স্বপ্ন।  জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে তাঁর কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।