এমপিওভুক্তির পর বাদ আগের শিক্ষকেরা

ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা ১৬ মে মাউশি মহাপরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদক বরাবর অভিযোগ করেছেন।

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের মানিক মিয়া আইডিয়াল কলেজটি এমপিওভুক্তির পর পুরোনো শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহীম খলিলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ, অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকেরা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা গত ১৬ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহীম খলিল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এলাকাবাসী ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ভেলুমিয়া আইডিয়াল কলেজ। ওই নামেই ১০ বছর কলেজে পাঠদান করা হয়। ২০১৩ সালে কলেজ পরিচালনায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় সমাজসেবক শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক মিয়া। তাঁকে কলেজটির সভাপতি করা হলে প্রতিষ্ঠানের নাম মানিক মিয়া আইডিয়াল কলেজ করা হয়। তখনো কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। ২০১৭ সালে মারা যাওয়ার আগে অধ্যক্ষ নজরুল কলেজে ২১ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। ১৬ দিন পর কলেজের সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক মিয়া মারা যান। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহীম খলিল সর্বশেষ ২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৭ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারীকে বাদ দিয়ে বেতন-ভাতার জন্য মাউশিতে তালিকা পাঠান। এসব ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের স্ত্রী সুরাইয়া খানম বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

সুরাইয়া খানম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোট ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যান। এর মধ্যে ইব্রাহীম তিনজন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারীকে টাকার বিনিময়ে রেখেছেন। বাকিদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে বাদ দেওয়া শিক্ষকদের জায়গায় নিজের পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁদের অনেকেই অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এ ছাড়া শূন্য পদ ঘোষণার আগেই ইব্রাহীম নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন এবং বেতন-ভাতার জন্য মাউশিতে কাগজপত্র পাঠান। এ ছাড়া ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কলেজের সম্পদ ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ করেছেন তিনি।

সুরাইয়া খানমসহ বাদ পড়া শিক্ষকেরা মাউশিতে লিখিত অভিযোগে পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের বহাল রাখতে হবে; কলেজের কাগজপত্র, শিক্ষক মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের নাম রাখতে হবে; অধ্যক্ষ নজরুলের পাওনা ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে; কলেজ পরিচালনা কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের পরিবারের একজনকে স্থায়ী সদস্য করতে হবে এবং যাঁরা দাতা নন, তাঁদের দাতাসদস্য থেকে বাদ দিতে হবে।

অভিযোগের বিষয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহীম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, মাউশির কাছে অভিযোগ দাখিল হয়েছে। তারাই তদন্ত করে বলবে কে সত্য আর কে মিথ্যা। মিথ্যা হলে তাঁরা থাকবেন না।

মাউশির বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানিক মিয়া আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’