ফুলপরীকে ছাত্রলীগ নেত্রী বললেন, ‘তোমার হাতে–পায়ে ধরে মাফ চাই’

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন
ছবি: প্রথম আলো

‘ফুলপরী, আমার সাথে এ রকম কোরো না। তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই।’ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী এসব কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় ফুলপরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তবে ফুলপরীর এই বক্তব্যের বিষয়ে অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী কোনো কথা বলেননি। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তদন্ত কমিটির কোনো সদস্যও এ বিষয়ে কথা বলেননি।

আরও পড়ুন

আজ অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচজনকে ফুলপরীর মুখোমুখি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক রেবা মন্ডলের কক্ষে বেলা ২টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ছিলেন তাঁরা। তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমানকে ওই কক্ষের বাইরে রাখা হয়।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ফুলপরী খাতুন পাবনার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে তিনবার ক্যাম্পাসে এসেছেন তিনি। তিনি প্রথমে হল প্রাধ্যক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। এরপর রেবা মন্ডলের কক্ষে নেওয়া হয়। ওই কক্ষে আতাউর রহমান তাঁর মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী, তাবাসসুম ইসলামসহ অভিযুক্ত পাঁচজন ওই কক্ষে প্রবেশ করেন।

আরও পড়ুন
ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, পাঁচজন কক্ষে প্রবেশ করার পর কমিটির সদস্যরা তাঁকে বাইরে বের করে দেন। এ সময় ওই কক্ষে অভিযুক্ত সবাই ছিলেন। আর তাঁর মেয়ে একাই ছিলেন।

প্রায় এক ঘণ্টা পর বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে প্রথমে কক্ষ থেকে বের হন ফুলপরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে কী করেছেন এ বিষয়ে ম্যাম-স্যাররা জানতে চাইলেন। আমি সেটা বলেছি এবং তাঁদের চিনিয়ে দিয়েছি।’ এ সময় অভিযুক্তরা কিছু বলেছেন কি না, জানতে চাইলে ফুলপরী বলেন, ‘হ্যাঁ বলেছেন। তাঁরা বলছেন, “ফুলপরী, আমার সাথে এ রকম কোরো না। তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই।” অন্তরা (সানজিদা) আপু রিকোয়েস্ট করল। কিন্তু আমার সাথে যা যা হয়েছে, সেটাতে আমি অটল ছিলাম।’

আরও পড়ুন

ফুলপরী বলেন, ‘আমি তাঁদের বললাম, কেবল চার-পাঁচ দিন হলো ক্যাম্পাসে এসেছি, কিন্তু আপনারা আমাকে নিয়ে একটুও ভাবেন নাই। আমি এ বিষয়ে আপনাদের সাথে আর কথা বলতে চাই না। প্রশাসন এখন যে ব্যবস্থা নেয়, সেটাই ঠিক।’ পাঁচজনকে আজ একসঙ্গে দেখে ভয় বা শঙ্কা কাজ করেছে কি না, জানতে চাইলে ফুলপরী বলেন, ‘একদমই না। ভয় পাইনি। বরং তাঁদেরই কান্না কান্না ভাব ছিল।

ফুলপরীর সঙ্গে কথা বলার সময় ওই কক্ষ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা-তাবাসসুমসহ পাঁচজন। এ সময় সানজিদা দ্রুত তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে একটি গাড়িতে উঠে চলে যান। সাংবাদিকেরা একাধিক প্রশ্ন করলেও তিনি নীরব ছিলেন। কারও কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। বাকি সদস্যরা একইভাবে বিভিন্ন দিকে দ্রুত সটকে পড়েন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রেবা মন্ডলসহ সব সদস্য গাড়িতে করে দ্রুত চলে যান। তাঁরা গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে কথা বলবেন না বলে জানান।

আরও পড়ুন
অভিযুক্ত তাবাসসুম। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে নীরবে বেরিয়ে যান তিনি। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন