নারী ও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়, অভিযুক্ত এএসআইকে প্রত্যাহার

মো. মোসাব্বিরছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাইপ্রাসপ্রবাসী এক ব্যক্তিকে নারী ও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে ৭০ হাজার টাকা আদায়ের ঘটনায় অভিযুক্ত অষ্টগ্রাম থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মোসাব্বিরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাঁকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। আজ শনিবার তিনি অষ্টগ্রাম থানা ছেড়ে যান।

এএসআই মোসাব্বির দেড় বছর ভৈরব থানায় কর্মরত ছিলেন। দুই মাস আগে অষ্টগ্রাম থানায় যোগ দেন তিনি। প্রতারণার শিকার বাচ্চু তালুকদার ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার বাসিন্দা। এক বছর আগে তিনি সাইপ্রাস থেকে দেশে ফেরেন। ফাঁদে ফেলে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৯ জুলাই পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বাচ্চু।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মোসাব্বিরকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি অষ্টগ্রাম থানা ছেড়ে গেছেন।

পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে বাচ্চু উল্লেখ করেন, তাঁর (বাচ্চু) বন্ধু ও ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার সালাউদ্দিনের গ্যারেজের ব্যবসা আছে। ওই গ্যারেজে এএসআই মোসাব্বিরের যাতায়াত ছিল। সালাউদ্দিনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে মোসাব্বিরের পরিচয় ঘটে। চলতি বছরের ৩০ মে সন্ধ্যায় সালাউদ্দিনের ফোন পেয়ে তিনি ওই গ্যারেজে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, এক নারীকে নিয়ে বসে আছেন মোসাব্বির। একই এলাকায় সালাউদ্দিনের বন্ধু শফিক মিয়ার একটি আইসক্রিম কারখানা আছে। সালাউদ্দিনের প্রস্তাবে গ্যারেজ থেকে তিনি ওই কারখানায় যান। সঙ্গে মোসাব্বির ও ওই নারী যান। সেখানে গিয়ে অপরিচিত দুজনকে দেখতে পান। সেখানে যাওয়ামাত্র পুলিশ দিয়ে তাঁর (বাচ্চু) হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন ওই ব্যক্তিরা। এ কাজে মোসাব্বির তাঁদের সহযোগিতা করেন। তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবন এবং ওই নারীর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার অভিযোগ তুলে জিম্মি করে ফেলেন। মুক্ত হতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন তাঁরা। শেষে স্ত্রীর মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে রাত ১১টায় তিনি ওই কারখানা থেকে মুক্ত হন।

বাচ্চু তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি একটি জমি বিক্রি করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি জানতেন, তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে। তাঁর ধারণা, ওই টাকা হাতিয়ে নিতে সালাউদ্দিন ও শফিকের সহযোগিতায় মোসাব্বির প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার এক সপ্তাহ পর প্রতিকার পেতে আমি দৌড়ঝাঁপ শুরু করি। বুঝতে পেরে ভৈরব থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে ২৫ হাজার টাকা ফেরত পাঠান মোসাব্বির।’

এ বিষয়ে কথা বলতে এএসআই মো. মোসাব্বিরের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘বাচ্চু আমার বন্ধু। তবে এ ঘটনার সময় আমি ছিলাম না।’ ফোন বন্ধ থাকায় শফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশে কর্মরত কয়েকজন জানান, ভৈরবে থাকা অবস্থায় মোসাব্বির একটি চক্রের মাধ্যমে মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। ভৈরব ছেড়ে যাওয়ার পরও পুরোনো কর্মস্থলে আসতেন। এখানে এসে নানা কৌশলে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নিতেন।