কিস্তির টাকা তুলতে গিয়ে মারধরে ব্র্যাক কর্মীর মৃত্যু

ব্র্যাক কর্মীকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহিন আলী।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের বিতরণ করা ঋণের টাকা তুলতে গিয়ে মারধরে সংস্থাটির এক মাঠকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী।

নিহত রেজাউল করিম (৫০) পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়িয়া থানার চৌবাড়িয়া হারোপাড়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। তিনি ব্র্যাকের সাভারের ভরারী বটতলা শাখার মাঠকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গ্রেপ্তার শাহিন আলী (২২) রাজশাহী জেলার চরঘাট থানার অনুপমপুরের মোরশেদ আলীর ছেলে। তিনি সাভারের একটি পোশাক কারখানায় পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভার মডেল থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফী জানান, গতকাল বুধবার সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকার আসাদুজ্জামানের দোতলা বাড়ির নিচতলায় সিঁড়ির সামনে ব্র্যাকের ভরারী বটতলা শাখার মাঠকর্মী রেজাউল করিমের মরদেহের খবর জানতে পারে পুলিশ। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর মাধ্যমে পুলিশ এ সংবাদ পায়। পরে সাভার মডেল থানার ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ রাসেল মোল্লার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে ওই বাড়ির ভাড়াটে শাহিন আলীকে এলোমেলোভাবে ঘুরতে দেখে সন্দেহ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তাঁর গলা ও পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ দেখতে পায় পুলিশ। শাহিনকে আটক করে থানায় এনে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহিল কাফী জানান, গত মঙ্গলবার শাহিনের ভাড়া বাসায় রেজাউল করিম কিস্তির টাকা তুলতে যান। এ সময় শাহিন টাকা নেই এবং পরে দেবেন বলে রেজাউলকে জানান। পরদিন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় কিস্তির টাকা আনতে শাহিনের বাসায় যান রেজাউল। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শাহিন বাগ্‌বিতণ্ডার একপার্যায়ে রেজাউলকে লাথি মারলে শাহিনের গলা ও পিঠে নখ দিয়ে খামচি দেন এবং চোখে ঘুষি মারেন রেজাউল। এ সময় শাহিন পুনরায় রেজাউলের পেটের নিচের অংশে লাথি মারলে সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে মারা যান রেজাউল।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাহিন মরদেহ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তাঁর কক্ষের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। পরে সুযোগ বুঝে মরদেহ কক্ষ থেকে বের করে সিঁড়ির নিচে রেখে দেন। সিঁড়ির নিচে মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ছাড়া রেজাউলের পকেট থেকে নেওয়া ৫০ হাজার টাকা শাহিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে বুধবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলে মো. কাউসার হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় শাহিন আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।